কি দুঃখের বিষয় যে আমাদের দেশের মেয়েরা অস্বাস্থ্যকর অন্দরের মধ্যে আবদ্ধ থাকিয়া বহির্জগতের কোনও সম্পর্কে আসিতে পায় না, কূপমণ্ডুকের ন্যায় জীবন যাপন করিতে বাধ্য হয়। ইহার ফলে তাহারা ছেলেবেলায় মাতার নিকট হইতে যে সমস্ত ভ্রান্ত শিক্ষা ও কুসংস্কারগুলি শিখে, সেগুলি তাহাদের মনে ধ্রুব সত্য বলিয়া গাঁথিয়া যায়, বড় হইয়াও আর সেগুলি ভুল বলিয়া বুঝিতে পারে না; কাজেই আবার নিজেদের ছেলেদের সেইমত শিক্ষা দিয়া থাকে; এইরূপে ভুল শিক্ষাগুলি তাহাদের অস্থিমজ্জাগত হইয়া উঠে।
বাস্তবিক আমাদের বালিকা বধূদের চরিত্র ঠাকুরমাদের দ্বারাই গঠিত হইয়া থাকে। আমরা ‘হোমরুল’ সম্বন্ধে অনেক কথা কাটাকাটি করিয়া থাকি কিন্তু অন্দরের ভিতর যে ঠাকুরমারূপী একজন যথেচ্ছাচারী সম্রাট রহিয়াছেন, এবং তিনি বালিকা বধূদের অনুমাত্র ব্যক্তিত্ববিকাশের সুযোগ না দিয়া যথেচ্ছ ছাঁচে ঢালাই করিতেছেন, একথা একেবারেই ভুলিয়া যাই। এইরূপে শিক্ষিত যুবকদিগের জীবনে দুটি ভাগ দেখিতে পাওয়া যায়। ইহার একটির সহিত আর একটির কোন সম্পর্ক নাই। বৈঠকখানায় তাঁহারা উপনিবেশগুলির ন্যায় ‘হোমরুল’ পাইবার জন্য বিস্তর বাক্বিতণ্ডার পর অন্দরে প্রবেশ করিয়া খেলাঘরের পুতুল খেলা আরম্ভ করেন। তাঁদের জীবন-সঙ্গিনীগণ জ্যান্ত পুতুল ছাড়া আর কি?
এই সব জ্যান্ত পুতুলের নিখুঁত ছবি রবীন্দ্রনাথের নিপুণ তুলিকায় চমৎকার ফুটিয়াছে:—
(বাসর শয়নে)
বর। জীবনে জীবনে প্রথম মিলন
সে সুখের কোথা তুলনা নাই।