পাতা:আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী.djvu/১৫৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২৬
আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী

হইবেন। আমাদের সমাজের অনেক নেতাই বরপনের বিরুদ্ধে বক্তৃতায় পঞ্চমুখ, কিন্তু আপনাদের ছেলের বিবাহের বেলায়, তাঁহারা সে সব কথা ভুলিয়া যান ও বেশ পীড়ন করিয়া টাকা লইয়া থাকেন। কিছু বলিতে গেলে তখন মায়ের বা স্ত্রীর ঘাড়ে অম্লানবদনে দোষ চাপাইয়া আপনি সাধু সাজিয়া বসেন। দেশের আশাভরসা-স্থল হে যুবকবৃন্দ! অন্যায়ের বিরোধী হইবার সাহস কি আপনাদের নাই? আত্মমর্য্যাদাজ্ঞান কি একেবারে লোপ পাইয়াছে?

 প্রাচীনকালে ভারতে গার্গী, মৈত্রেয়ী প্রভৃতি বিদুষী জন্মগ্রহণ করিয়া গিয়াছেন বলিয়া আমরা অহরহ গর্ব্ব করিয়া থাকি। বেদের অনেক স্ত্রোত্র যে মেয়েরা লিখিয়া গিয়াছেন তাহাও আমরা জানি এবং সুবিধামত উল্লেখ করি। বৌদ্ধধর্ম্মের অভ্যুদয়কালে মেয়েরাও যে ধর্ম্মসম্বন্ধে বক্তৃতা করিয়া লোক মাতাইতে পারিতেন, তাহাও আমরা পড়িয়াছি। তবে আজকাল স্ত্রীশিক্ষার প্রতি আমরা এত উদাসীন কেন?

 উচ্চ জাতির মেয়েরাও যে কোন কোন বিষয়ে ঠিক অবনত জাতিদের ন্যায়ই কষ্ট ও অসুবিধা ভোগ করিয়া থাকেন, সে বিষয়ে কোন সংশয় নাই। আমরা তাঁহাদিগকে খাইতে পরিতে দিই এবং মোটের উপর ভাল ব্যবহার করিয়া থাকি সত্য, কিন্তু দুর্লভ মানবজীবনে খাওয়া পরাই কি সার হইল? আর কিছুই কি করণীয় নাই? অঁহাদিগকে লেখাপড়া শিখাইতে এবং যাহাতে তাঁহাদের মানসিক বৃত্তিগুলি যথোচিত মার্জ্জিত ও পরিবর্দ্ধিত হইতে পারে, তাহার চেষ্টা করিতে কি আমরা ধর্ম্মতঃ এবং ন্যায়তঃ বাধ্য নহি? সমাজের অর্দ্ধাঙ্গই যদি ঘোর অজ্ঞানান্ধকারে নিমজ্জিত রহিল, তবে তাহার উন্নতি কিরূপে সম্ভব হইবে?