যে এই অসামঞ্জস্যের ফলে তার বুদ্ধিবৃত্তি ও কর্ম্মশক্তি ক্রমে ক্ষয় পাচ্ছে। কলেজে জ্যোতির্ব্বিদ্যা অধ্যয়নকালে বাঙালী যুবক বুঝেন চন্দ্রের ছায়া-সম্পাতে সূর্য্যগ্রহণ ঘটে; এদিকে বাড়ীর ভিতর এসে দেখেন আয়ীমা, ঠাকুরমা, দিদিমা, হাঁড়ি ফেলে দিয়ে গঙ্গায় স্নান ক’রে, এসেছেন—কেন না সূর্য্যদেব রাহুগ্রস্ত হয়েছিলেন! আমাদের পুঁথিতে বিদ্যা একরূপ, আর সমাজগত ব্যবহার ভিন্নপ্রকার। এরূপ কপটতায় আমরা অতি অল্প বয়স থেকে অভ্যস্ত হয়ে আসছি ব’লে অন্তরকে ফাঁকি দিয়ে বাহিরের ঠাট বজায় রাখতে আমাদের তেমন ঠেকে না—দ্বিধাবোধ হয় না। বুদ্ধি দিয়ে আমরা যা গ্রহণ করি, সামাজিক ব্যাপারে তার প্রায় বিরুদ্ধাচরণই ক’রে থাকি। কিন্তু এরূপ বিরোধ আমাদের সর্ব্বপ্রকার উন্নতির পরিপন্থী। যুক্তি যা স্বীকার করে হৃদয় যা গ্রহণ করতে চায়, চিরাচরিত ও গতানুগতিকের চাপে সেই চিন্তা ও ভাবকে যদি আমরা জীবনযাত্রাকালে বধ ক’রে চলি তবে বাহিরের চলাফেরা বজায় থাকলেও অন্তরে আত্মহত্যাই ঘটে! আমি অন্যত্র এই একই কথা বলেছি যে মানসিক, আর্থিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক উন্নতির চেষ্টা একসঙ্গে হওয়া চাই! এর মধ্যে একটিকে চেপে অন্যগুলির কথা প্রচার করবার প্রয়াস বিফল হবে, তাতে জাতির কল্যাণ হবে না। কারণ জাতীয় উন্নতি অর্থে একটা বাঁধা-ধরা কিছু বুঝায় না,—বুঝায় সকল দিকে সর্ব্বপ্রকারে জাতীয় জীবনের অবাধ বিকাশ ও প্রসার।
স্বীকার করতেই হবে যে জাতিভেদ প্রথার ভীষণ বদ্ধনে আমরা আড়ষ্ট হয়ে আছি, অধঃপাতে গেছি; এতই অধঃপাতে গেছি যে আবার ধর্ম্মের অজুহাতে, আধ্যাত্মিকতার দোহাই দিয়ে আমরা এই প্রথাকে—বিশেষতঃ এই ছোঁয়াছুয়ি ব্যাপারটাকে—বিধিসঙ্গত ও বিজ্ঞানসম্মত