১৲
করিবারে সাধ একেবারে চলিয়া যায়; কিন্তু তাঁহাকে দায়ে ঠেকিয়া কর্ম্মগ্রহণ করিতে হয়; তিনি বিলাত হইতে উচ্চ রসায়নীবিদ্যা আয়ত্ত করিয়া দেশে ফিরিয়াছেন, অন্য পথে যাওয়াও সুবিধাজনক নহে। বিশেষতঃ মৌলিক গবেষণা দ্বারা নূতন নূতন তত্ত্বাবিষ্কার করিবার স্পৃহা তাঁহাকে অনুপ্রাণিত করিয়া তুলিয়াছিল। এমন কি, প্রেসিডেন্সি কলেজ ভিন্ন অন্য কোন কলেজে নিযুক্ত হইলেও তাঁহার এই বাসনা ফলবতী হইবার কোনও সম্ভাবনা ছিল না। সুতরাং একরূপ বাধ্য হইয়াই ‘রোগী যেন নিম খায় মুদিয়া নয়ন’ গতিকে তাঁহাকে এই কর্ম্ম গ্রহণ করিতে হইল।
ঈপ্সিত জ্ঞানানুশীলনের পথে এইরূপে নানা বিঘ্ন-বাধা উপস্থিত হওয়ায় প্রফুল্লচন্দ্রের জ্ঞানপিপাসু চিত্ত সহজেই বিক্ষুব্ধ হইয়া উঠিল। তিনি শিক্ষাবিভাগের এই সকল নীরব অত্যাচার মাথা পাতিয়া গ্রহণ করিলেন বটে; কিন্তু পরাধীনতার একটা গ্লানি আসিয়া বৃশ্চিক দংশনের ন্যায় তাঁহার সর্ব্ব শরীরে এমন একটা জ্বালা উৎপন্ন করিল যে তাহারই ফলে তাঁহার সমগ্র জীবন ভবিষ্য বংশীয়গণের মুক্তির সন্ধানে উৎসৃষ্ট হইয়াছে।
এই সময়ে প্রফুল্লচন্দ্রের অন্তরপ্রদাহে সার জগদীশ্চন্দ্রের পারিবারিক স্নেহ, যত্ন ও ভালবাসা কতকটা বাহ্য প্রলেপের কাজ করিয়াছিল। প্রফুল্লচন্দ্র যখন এডিনবরায় অধ্যয়ন করিতেন, বাঙ্গালার অন্যতম শ্রেষ্ঠ রত্ন বিজ্ঞানাচার্য্য সার জগদীশ্চন্দ্র বসু মহাশয় তখন কেম্ব্রিজের ছাত্র ছিলেন। উভয়ের প্রথম লণ্ডনে সাক্ষাৎ হয়। প্রথম সাক্ষাৎ হইতেই চুম্বকের ন্যায় উভয়ে উভয়ের প্রতি আকৃষ্ট হইতে থাকেন এবং প্রথম আলাপ হইতেই উভয়ের মধ্যে সৌহার্দ্দ্যের সৃষ্টি হয়। “সম্বন্ধমাভাষণপূর্ব্বমাহুঃ”। জগদীশ্চন্দ্র ১৮৮৬ সালে ভারতীয় শিক্ষাবিভাগে প্রবেশ