ছিলেন। অর্থাৎ আমার প্রতিপাদ্য এই যে জাতিভেদরূপ বিষময় প্রথার এই ফল দাঁড়িয়েছে যে আমাদের দেশে যারা হীন শ্রেণীর তারা এমন পদদলিত, অবমানিত, ঘৃণিত, লাঞ্ছিত, অবজ্ঞাত, যে কোন সুযোগে তাদের প্রতিভা বিকশিত হবার ও ভদ্রশ্রেণীস্থ হবার উপায় নেই।
সুতরাং বর্ত্তমান য়ুরোপ বা আমেরিকায় জাতিভেদ আছে, অতএব আমাদের দেশেও জাতিভেদ কোন ক্ষতির কারণ হ’তে পারে না— এই ব’লে চীৎকার ক’রে যাঁরা পুরাতনের কঙ্কাল এখনও আঁক্ড়ে ধরে রাখ্তে চান, তাঁরা একবার যুক্তিহকারে বিবেচনা ক’রে বুঝে দেখ্বেন যে পাশ্চাত্য দেশে আভিজাত্যের সম্মান এদেশের মত একটা নিছক পাগলামি নয়। তাঁতি, জোলা, গাড়োয়ানের ঘর থেকে এদেশে কজন বড়লোক হবার সুযোগ পেয়েছে? এদেশে যদি তেলির ঘরে জন্ম হ’ল ত মানুষ চিরকাল তেলিই রয়ে গেল,—সে যত গুণের গুণী হোক না কেন সমাজে খানিকটা হেঁট হ’য়ে থাকতেই হবে, গুণ থাক্লেও সমুচিত আদর সে কখন পাবে না। শ্রীযুক্ত সত্যেন্দ্রপ্রসন্ন সিংহ আজ লর্ড হয়েছেন বিলাতী আভিজাত্যের নিয়মে, কিন্তু আমাদের দেশে যিনি কুলীন বামুন হ’য়ে না জন্মেছেন তিনি আর তা হ’তে পারবেন না। লর্ড রবার্ট্স্ জীবনের প্রারম্ভে ছিলেন সামান্য সৈনিক; কিন্তু সামরিক বিভাগে অসাধারণ গুণপনার পরিচয় দিয়ে শেষে সমাজে শ্রেষ্ঠ আভিজাত্য লাভ করিয়াছিলেন। লর্ড কিচ্নারও তাই। এরূপ আরও অনেকের নাম করা যেতে পারে যাঁরা বিদ্যাবিজ্ঞানে, ব্যবসাবাণিজ্যে, কৃষিশিল্পে সর্ব্বপ্রকার কর্ম্মক্ষেত্রে গুণের পরিচয় দিয়ে, অসাধারণত্ব দেখিয়ে, সামান্য থেকে বড় হয়ে উঠেছেন এবং পাশ্চাত্য সমাজ তাঁদের বড় ব’লে, শ্রেষ্ঠ ব’লে, গুণান্বিত ব’লে আদর ক’রে বরণ ক’রে নিয়েছে। ইংলণ্ডে চাষার ছেলে, মুদীর ছেলে, অক্স্ফোর্ড বা কেম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েক