পাতা:আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী.djvu/১৮০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জাতিভেদ
১৪৯

যে সমাজের চিন্তা ও কর্ম্মশক্তি পুষ্ট হয় নিম্নস্তরের লোকের দ্বারা। জনসাধারণের মধ্য হইতেই যথার্থ শিক্ষিত ও গুণসম্পন্ন লোক উদ্ভূত হ’য়ে দেশের ভাব ও কর্ম্মের ধারাকে নানা অবদান পরম্পরায় বিচিত্র ক’রে তোলে। এই ধারাকে অক্ষুণ্ণ রাখবার জন্যে সমাজের উচ্চস্তরের মুষ্টিমেয় লোকের সামর্থ্য যথেষ্ট নয়। সমাজদেহের শারীরিক মানসিক ও নৈতিক—সকল প্রকার পুষ্টির উপাদান জনসাধারণের মধ্যে যেরূপ প্রচুর পরিমাণে বর্ত্তমান আছে, উচ্চস্তরের অল্পসংখ্যক লোকের মধ্যে সেরূপ থাকা কখনও সম্ভব নয়। সুতরাং জাতির দোহাই দিয়ে সেই বিপুল জনসঙ্ঘকে পদদলিত ক’রে আমরা জাতিগঠনে যে কত বাধার সৃষ্টি করেছি তা বর্ণনা অপেক্ষা কল্পনারই অধিগম্য। বর্ত্তমানে আমাদের শাসন-সংস্কারের দাবীকে ইংরেজ মুষ্টিমেয় শিক্ষিত লোকের চীৎকার ব’লে উড়িয়ে দিচ্ছে। কিন্তু জনসাধারণ যখন একবার এই দাবী করবে তখন কেউ তাকে আট্‌কাতে পারে কি? পৃথিবী জুড়ে জনসাধারণের যুগ এসেছে। আমাদেরও এই যুগকে আনন্দ ও উৎসাহের সহিত বরণ ক’রে নিতে হবে। আপনার দেশভাইকে অস্পৃশ্য ব’লে আর দূরে রাখলে চলবে না।

 এখন আমরা সভ্যজগতে সকল জাতির সঙ্গে এক আসরে বসতে চাই; পৃথিবীর জাতিসঙ্ঘে (League of Nations) স্থান পেতে চাই। কিন্তু অন্যে আমাদের কি চক্ষে দেখে আজ তা তোমাদের ভেবে দেখতে হবে: বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ, জগদীশচন্দ্র আমেরিকা প্রভৃতি সভ্যদেশে ভারতবর্ষের যোগ্য প্রতিনিধি ব’লে পরিচয় দিয়ে এসেছেন। কিন্তু সে আরম্ভ মাত্র—কোকিলের প্রথম গান বসন্তের আগমনবার্ত্তা ঘোষণা করে মাত্র। দারিদ্র্য ও সামাজিক অত্যাচার প্রভৃতি নানা দোষের জন্য আজও আমরা অস্ত্র জাতির অশ্রদ্ধার পাত্র হ’য়ে আছি। আমাদের