সকল সুসজ্জিত প্রাসাদ, তার প্রায় সকলগুলি আমাদের দেশবাসীর। কিন্তু কল্কাতার চৌরঙ্গীতে কালা আদ্মীর স্থান নেই—তারা থাকে সেই “নেটিভ” কোয়ার্টারে যেখানে আলো ও বাতাস অন্ধকারের মলিনতায় প্রায় ডুবে যায়। বোম্বাই সহরে স্যর দোরাব তাতা, স্যর বিঠলদাস ঠাকারস্যে, স্যর ফজল্ভাই করিমভাই প্রভৃতি—এরাই হচ্ছেন ঐ সকল প্রাসাদের মালিক। এরা মহাধনী, শিক্ষিত, কৃতবিদ্য। স্যর বিঠলদাস স্ত্রীশিক্ষার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে একদিনে ১৫ লক্ষ টাকা দান করেছেন। বাঙলায় এমন মহাপ্রাণ বণিকরাজ আছে কি? স্যর ফজলভাই কয়েকটা কলের স্বত্ত্বাধিকারী। কোন কোন কলে ১০০ টাকায় ১০০০ টাকা পর্য্যন্ত মুনাফা দিয়েছে। আর আমরা ১৮ লক্ষ টাকা মূলধনের ভাঙা “বঙ্গলক্ষ্মী” নিয়ে, ১৯০৬ সাল থেকে ১৯২১ পর্যন্ত হাবুডুবু খাচ্ছি। আমাদের অনুসন্ধিৎসা ও কর্ম্মকুশলতা এতই অল্প যে বাঙলায় ২/১টি ছোটখাট কল চালাবার জন্যে হয় ইংরেজ, নয় বোম্বাইবাসীকে ম্যানেজার নিয়ে আসতে হচ্ছে। এই ১৪ বছর কেবল চীৎকারে কাটালাম।
যুদ্ধের পূর্ব্বে ম্যাঞ্চেষ্টার হ’তে প্রতি বৎসর ৩০০ কোটি টাকার নানাপ্রকার কাপড় বিদেশে রপ্তানি হ’ত। তার এক তৃতীয়াংশ অর্থাৎ প্রায় ১০০ কোটি টাকার কাপড় ভারতের বাজারে আস্ত। এই ১০০ কোটি টাকার কাপড় যাদের দরকার তাদের মধ্যে শতকরা ৯৯ জন দরিদ্র কৃষক। কোন রকমে লজ্জা নিবারণে জন্যে আমাদের দেশে এই ১০০ কোটি টাকার কাপড়ের প্রয়োজন। তার মধ্যে কল্কাতা হ’তে ৪০/৫০ কোটি টাকার বিলাতী কাপড় বাঙলার বিভিন্ন জেলায়, বিহার ও আসামে চালান হয়। এই কোটি কোটি টাকার কাপড় একদিনে গোলদীঘির আন্দোলনে উৎপন্ন হবে কি?