পাতা:আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী.djvu/১৯৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জাতিগঠনে বাধা-ভিতরের ও বাহিরের
১৬৭

কর্‌তে গিয়েও তাদের আড়ষ্ট বুদ্ধি সাড়া দেয় না; ঐ ডিগ্রী, আর চাকরী। বুদ্ধি খাটিয়ে আপন হাতের জোরে কিছু সৃজন ক’রে তোল্‌বার কল্পনা তাঁদের মনে কখনও জাগে না। এবার বিলাত থেকে প্রত্যাগমনের পথে জাহাজে দু’জন দেশীয় বণিকের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। তাঁদের মধ্যে একজন কল্‌কাতার এক ধনী সওদাগরের পুত্র। লণ্ডন, নিউইয়র্ক প্রভৃতি স্থানে তাঁদের ব্যবসার কেন্দ্র আছে। আর-একজন গুজরাটী বেণিয়া—১৪ মাস বিলাতে ছিলেন-পশমী জিনিষের ব্যবসা করেন। এই দুটি যুবক শিক্ষিত, কিন্তু তাদের ডিগ্রী নেই, তাঁরা ছাপহীন। জাহাজে একজন ম্যাট্‌সিনির জীবনচরিত পাঠ কর্‌ছিলেন, আর একজন প্রথমে ওমর খৈয়াম্‌ এবং পরে Light of Asia পাঠ কর্‌ছিলেন। তাই বলি ব্যবসা ও শিক্ষায় বিরোধ নেই—একেবারেই নেই। কার্ণেগী ও রক্‌ফেলারের নাম কে না শুনেছেন? এদের শিক্ষা যেরূপ গভীর, ব্যবসার বিস্তার সেইরূপ অদ্ভুত। জনসাধারণের হিতার্থে কার্ণেগী ১০০ কোটি টাকা ও রক্‌ফেলার বিদ্যাশিক্ষার ও নরহিতের জন্য ১৫০ কোটি টাকা দান করেছেন। এদের জীবন যেন উদ্যম, অধ্যবসায়, শিক্ষা, দীক্ষা, ব্যবসা, বাণিজ্য এবং করুণা ও মহাপ্রাণতার অপূর্ব্ব সঙ্গম। আর আমাদের এমনি দুর্ভাগ্য যে অন্য দেশে বহু চেষ্টায় যা সম্ভব হয়েছে আমরা একপ্রকার বিনা চেষ্টায় শুধু গলাবাজীর দ্বারা তা সার্‌তে চাই। কিন্তু গলাবাজীর কস্‌রতে গলাই ভেঙ্গে যায়, আসল কাজ এতটুকুও হয় না। তবু আমরা নিজের আলস্য ও উদ্যমহীনতার দোষ দিই না-দোষ দিই পারিপার্থিক অবস্থার। কেউ বলেন—আঃ বড় গরম, কাজ কর্‌তে পারি না; আবার কেউ বা বলেন— উঃ কি শীত, কাজে হাত পা ওঠে না।