১৵৹
হইত। সুতরাং প্রেসিডেন্সি কলেজের যন্ত্রাগারের অবস্থাও তত উন্নত ছিল না। এডিন্বরা বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্রাগারে কাজ করিয়া আসিয়া কলিকাতার এই সামান্য যন্ত্রাগারে স্বাধীন গবেষণার কার্য্য চালান প্রফুল্লচন্দ্রের পক্ষে একরূপ অসম্ভব ব্যাপার হইয়া দাঁড়ায়। কত ধৈর্য্যের সহিত যে তাঁহাকে এই সময়ে নানা বিঘ্ন অতিক্রম করিয়া, সত্যের পথে অগ্রসর হইতে হইয়াছে, তাহা ভাবিলেও বিস্মিত হইতে হয়।
আদর্শ অধ্যাপকরূপে প্রফুল্লচন্দ্রের যশ সুপ্রতিষ্ঠিত হইল বটে, তাঁহার চেষ্টায় যন্ত্রাগারেরও যথেষ্ট উন্নতি হইল, কিন্তু তাঁহার অন্তরে অন্তরে যে অনিদ্র বাসনা চক্ষু চাহিয়া জাগিয়া রহিল, তাহাকে শান্ত করিবার কোন উপায়ই তিনি সহজে করিতে পারেন নাই। সেই যে এডিন্বরায় অধ্যয়নকালে তিনি ব্যথিত চিত্তে লক্ষ্য করিয়াছিলেন জাপানী ছাত্রগণের বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধে লণ্ডন ও বার্লিনের বৈজ্ঞানিক পত্রগুলি পূর্ণ হইতেছে; আর জাপানের সভ্যতার মূলাধার ভারতবর্ষ মহানিদ্রায় শায়িত; তিনি যে আশা করিয়াছিলেন, ভারতের এ মহানিদ্রা ঘুচাইয়া পুনরায় জ্ঞানের বর্ত্তি প্রজ্জ্বলিত করিতে হইবে, ভারতীয় ছাত্রগণের মৌলিক গবেষণায় ও প্রবন্ধগৌরবে জগতের বিস্ময় উৎপাদন করিতে হইবে[১]। কিন্তু বহু দিন চলিয়া গেল, কোন ছাত্রই তৃষ্ণার্ত চিত্তে তাঁহার নিকট আসিল না; যদি বা দুই এক জন আসিল, তাহারা দুই এক মাস কাজ করিয়া ডেপুটীগিরি বা ওকালতীর গন্ধে ছুটিয়া পলাইল।
প্রফুল্লচন্দ্র নীরবে তাঁহার গবেষণার পথে অগ্রসর; শ্রান্তি নাই, বিশ্রাম নাই, সমান ভাবে নীরব কর্ম্মী পথ বাহিয়া চলিয়াছেন! তাঁহার কেবলই মনে হইতেছে, তিনি যে বৈজ্ঞানিক গবেষণার ভাব জাগাইয়া তুলিয়াছেন তাঁহার অবর্ত্তমানে কে তাহা সঞ্জীবিত রাখিবে? তিনি
- ↑ Essays and Discourses by Sir P. C. Roy (G. A. Natesan.)—৩২ পৃষ্ঠা।