পাতা:আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী.djvu/২০০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
জাতিগঠনে বাধা-ভিতরের ও বাহিরের
১৬৯

কর্‌ব—তা না ক’রে সঙ্কীর্ণতার গণ্ডিতে আমরা নিজেকে আবদ্ধ কর্‌বার চেষ্টা করছি। এই কি হিন্দুমুসলমান-সম্প্রীতির লক্ষণ? এই কি জাতি গঠনের সূচনা?

 আমরা এখন “জাতীয়” শিক্ষা চাই। কিন্তু জাতীয় শিক্ষা কি? জাতীয় শিক্ষা অর্থে কি বটতলার বই পড়া? আর্য্যসমাজের লোকে জাতীয় শিক্ষার অর্থ কর্‌চেন বেদপাঠ করা; কেননা তাঁদের মতে বেদ অভ্রান্ত। বিবেকানন্দের ভক্ত বল্‌বেন—বেদান্ত পাঠ কর— দ্বৈত, অদ্বৈত ও বিশিষ্ট-দ্বৈত-বাদ বিচার কর। আবার কেহ বা বল্‌বেন—রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণ পাঠ কর। কিন্তু হিন্দু, মুসলমান, খৃষ্টান প্রভৃতি নানাধর্ম্মাবলম্বী ভারতবাসীগণ সকলে এই ব্যবস্থায় সম্মত হবেন কি? মুসলমান জাতীয় শিক্ষা অর্থে বল্‌বেন—কোরান পড়। খৃষ্টান বল্‌বেন—বাইবেল পড়। এত মতের অনৈক্য হ’লে আসল কাজে যে বাধা পড়বেই। পরমধার্ম্মিক হিন্দু রাজার রাজত্ব কালে শূদ্র তপস্যা করেছে ব’লে তার শিরশ্ছেদনের ব্যবস্থা হল; মনুমহাশয় ব্যবস্থা করেন যে শূত্রের কর্ণে বেদোচ্চারণ-শব্দ প্রবেশ কর্‌লে উত্তপ্ত তরল সীসক সেই কর্ণে ঢেলে দিতে হয়। এই মনুস্মৃতি নিয়ে জাতীয় শিক্ষার ব্যবস্থা হয় কি? বেদ, বেদান্ত পাঠ্য হ’লে বাঙলার শতকরা ৫২ জন মুসলমান কি কর্‌বে? দয়ানন্দ বা বিবেকানন্দ—কোন্‌ পন্থী হলে মুসলমান ভ্রাতাদের টেনে নেওয়া যেতে পারে? আমরা হিন্দু মুসলমান এক ব’লে আহ্লাদে নৃত্য কর্‌ছি, কিন্তু মুসলমান আমাদের জল ছুঁলেই সর্ব্বনাশ। জল খেতে হ’লে পানিপাঁড়ে, আর চা খেতে হ’লে কেল্‌নার। কি চমৎকার! বক্তৃতার স্রোতে গা ঢেলে দিয়ে অনেক যুবক দেশোদ্ধার-ব্রতে জীবন উৎসর্গ কর্‌বেন প্রতিজ্ঞা কর্‌লেন। কিন্তু আবেগ ও উত্তেজনা