সভ্যতার চরম ও তাহাতেই আত্মার মুক্তি ও তৃপ্তি হয় এই ধারণা পোষণ ও প্রচার করিতেন তাহা নহে, তখনকার দিনে প্রকাশ্যে মদ খাওয়াও চলিত। সমাজের সর্ব্বত্রই একটা উদ্দাম উচ্ছৃঙ্খলতার ভাব দেখা গিয়াছিল। পিতৃদেবের কাছে শুনিয়াছি স্বর্গীয় রাজনারায়ণ বসু মহাশয় যৌবনকালে মদকে উপাদেয় পানীয় বলিয়া মনে করিতেন; কিন্তু প্রবীণ বয়সে তাঁহার ঐ ভ্রান্ত ধারণা দূর হয়—এবং প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য সভ্যতার সার গ্রহণ করিয়া স্থূলতঃ তিনি নবজীবন লাভ করেন। শেষ বয়সে তিনি হিন্দুধর্ম্মের শ্রেষ্ঠতা বিষয়ে বক্তৃতা দিতেন। সেই সব বক্তৃতা ছাপার অক্ষরে যখন ঘরে ঘরে ছড়াইয়া পড়িল, তখন অনেকে ভাবিলেন হিন্দুসমাজ অনেকখানি এগিয়ে গেল, এইবার প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য শিক্ষার সার গ্রহণ করিয়া, রামমোহন রায়ের প্রদর্শিত পথে, দেশের ও সমাজের ভাবী উন্নতির বনিয়াদ স্থাপন করিতে হইবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় সে আশা ফলবতী হইল না। তাহার কারণ কি? কারণ এই দেখা গিয়াছে অসত্য ও ভ্রান্ত ধারণার সহিত আপোষ করিতে করিতে আমরা এক পাও অগ্রসর হইতে পারি নাই। সমাজে বাস করিতে হইলে আপোষ দরকার—আপোষ না হইলে চলে না। যদি গাড়ীর সামনে একটা ঘোড়া যুড়ে দেওয়া যায়—এবং গাড়ীর পিছনে আর একটা সমান বলশালী ঘোড়া জুড়ে দেওয়া যায় ও তাহাদের তাড়না করা যায়, তাহা হইলে দেখা যায় গাড়ী চলে না। যাহারা mechanics পড়েছেন তাঁহারা এই কথাটা সহজেই বুঝিতে পরিবেন। আমাদের জীবনকে সত্য একদিকে টানে, মিথ্যা অপর দিকে টানে। কাজেই আপোষ দরকার-কিন্তু তাহার সীমা আছে। মিথ্যার সহিত বনিবনাও রাখিতে গিয়া আমরা সব হারিয়ে ফেলেছি। একটা মামুলী গল্প আছে—প্রাচীন কালে এক রাজা এক দীঘি খনন
পাতা:আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী.djvu/২০৮
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মিথ্যার সহিত আপোষ ও শান্তি ক্রয়
১৭৭