পাতা:আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী.djvu/২১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
মিথ্যার সহিত আপোষ ও শান্তি ক্রয়
১৮৩

দুইজন বাৎস্যগোত্র বারেন্দ্র যুবকের জন্য পাত্রী আবশ্যক। আরও একটা শুনুন,—কায়স্থ মৌদ্‌গুল্য গোত্ত্রজ যুবকের জন্য সুন্দরী ও গুনসম্পন্না পাত্রী আবশ্যক। (সুন্দরী পাত্রী ত সকলেই চাহেন, কিন্তু জিজ্ঞাসা করি যাঁহারা সুন্দরী কন্যা চাহেন তাঁহারা কি সকলেই কন্দর্পবিনিন্দিত?) এই রাঢ়ী বারেন্দ্র বঙ্গজ—এসব কেন? ব্রাহ্মণের কথা ছাড়িয়া দিই—কায়স্থের মধ্যে এই কৃত্রিম ব্যবধানের সৃষ্টি হইয়াছে মাত্র ২৫০/৩০০ বৎসর। রঘুনন্দনের ও পুরন্দর খাঁর ব্যবস্থা—শাস্ত্রসম্মত নহে—তবুও এই প্রথা মানিয়া চলিতে হইবে? বঙ্গজ কায়স্থ ও দক্ষিণ রাঢ়ী কায়স্থ পাশাপাশি বাস করে অথচ বৈবাহিক ক্রিয়া তাহাদের মধ্যে হইবে না; একই শ্রেণীর মধ্যে আবার সকল অবস্থায় কুলীন ও মৌলিকের মধ্যে বিবাহ হয় না। জানি এসব কৃত্রিম প্রথা—এসব লোকাচারের মধ্যে সত্যের অংশ নাই তবু ভয় দূর করিতে পারিতেছি না। জানিয়া শুনিয়া আবার আমরাই এই সব কুসংস্কারের পোষকতা করিতেছি। আজকাল মেয়ের বিবাহে যে এত কষ্ট পাইতে হয়—এইসব কৃত্রিম প্রথাই কি তাহার মূখ্য কারণ নয়? অসবর্ণ বিবাহ দূরে থাক্, যদি উত্তররাঢ়ী, দক্ষিণরাঢ়ী, বঙ্গজ ও বারেন্দ্রের ভিতর বিবাহের কোন প্রকার লৌকিক বাধা না থাকিত তবে মেয়ের বাপ অনেক দুর্দ্দশার হাত হইতে রক্ষা পাইত। রাজা রাজবল্লভ বিক্রমপুরের বৈদ্য—কেশবচন্দ্র সেন ও তাঁহার আত্মীয়গণ গরিফা সমাজ ভুক্ত, অথচ এইটুকু সাহস হইল না যে তাহাদের বংশধরগণ পরম্পর বিবাহদি ক্রিয়া কর্ম্ম করেন। বিবাহ-সমস্যা দিন দিন প্রবল হইতে প্রবলতর হইতেছে। দেশের চিন্তাশীল যুবকগণ ও সমাজের নেতাগণ যদি এখন হইতে সাবধান না হয়েন তবে বিবাহ-সমস্যা অন্ন ও বস্ত্রসমস্যা অপেক্ষা আরও ভীষণ আকার ধারণ করিবে। মিথ্যা দেশাচার ও কপট লোকাচারের উপর যে বিধি–