পাতা:আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী.djvu/২১৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮৪
আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী

ব্যবস্থা প্রতিষ্টিত, জানিনা, হইতে পারে এক সময় তাদের প্রয়োজনীয়তা ছিল, কিন্তু এখন সম্যক্ উপলব্ধি করেছি—যাহা অসার, যাহা বিবেকবিরুদ্ধ, যাহা কৃত্রিম সেই সব প্রথা ও সংস্কার আঁক্‌ড়ে ধরে থাকা শুধু সমাজের পক্ষে নয়—দেশের পক্ষে, জাতির পক্ষে অকল্যাণকর। যাহা অন্তঃসার শূন্য ও জাতীয় উন্নতির অন্তরায় ও পরিপন্থী তাহা সর্ব্বোতোভাবে ত্যাগ করিতে হইবে—ইহার জন্য সৎসাহসের প্রয়োজন। স্মরণ রাখা উচিত যে নৈতিক-সাহস বিবর্জ্জিত জাতি কোন দিন জগতের কোন মহৎ কাজ করিতে পারে না।

 তারপর বাল্য বিবাহ। রোজগারের ক্ষমতা নাই—অথচ বিবাহ না করিলে চলিবে না। শিক্ষিত হউক আর অশিক্ষিতই হউক, কোন তফাৎ দেখিতে পাই না। ছেলের বাপ হয়ত ছেলের পড়ার খরচ কুলাইয়া উঠিতে পারেন না কাজেই একজন বেহাই খুঁজিতে লাগিলেন— বুক ফুলাইয়া লোকের কাছে প্রচার করিতে লাগিলেন যে তিনি পণপ্রথার বিরোধী—তবে ছেলেটা খুব মেধাবী—পড়িতে না পাইলে তাহার জীবন ‘মরুভূমি’ হইয়া যাইবে, সেই জন্যই ছেলের পড়ার বাবদ মাসিক ‘যৎ কিঞ্চিৎ’ সাহায্য পাইলেই পুত্রটাকে পাত্রীস্থ করিতে সম্মত আছেন। মেয়ের বাপ দেখিলেন, একসঙ্গে ৫ হাজার টাকা খরচ করিবার সামর্থ্য তাঁহার নাই—সুতরাং মন্দের ভাল। আর ছেলে বাইরে যাহাই বলুন মনে মনে ভাবিলেন, পড়াও হইবে এবং শ্বশুরের পয়সায় কয় বৎসর বেশ আরামে ও আমোদে কাটিবে। ফেল হইলে হয়ত বাবা টাকা পাঠান বন্ধ করিতে পারেন—কিন্তু শ্বশুরের টাকা নিয়মিত ভাবেই আসিতে থাকিবে। সুতরাং অষ্টাদশবর্ষীয় যুবা এক দ্বাদশবর্ষীয়ার পাণিগ্রহণ (পাণিপীড়ন?) করিলেন। মা বলিলেন, বেশ ছোট্ট বউ হয়েছে—ঘর ‘আলো’ কর্‌বে। এই যে বাল্য বিবাহের ব্যবসাদারী—