ইহাতে যে সমাজের কত অনিষ্ট হয় দু’এক কথায় তাহাই আলোচনা করিব।
কথায় কথায় আজকাল বলি, আমরা আর্য্যসন্তান, সনাতন হিন্দুধর্ম্ম রক্ষা করাই আমাদের কর্ত্তব্য; কিন্তু কথায় ও কার্য্যে কোন প্রকার সামঞ্জস্য রাখিবার চেষ্টাও করি না। বেদ, উপনিষদ বা রামায়ণ মহাভারতের যুগে ছাত্রেরা বিদ্যাশিক্ষার জন্য গুরুগৃহে অবস্থিতি করিতেন। ব্রহ্মচর্য্যপালন করিয়া কাষ্ঠ-আহরণ, গো-পালন, গুরু-সেবা দ্বারা সাধারণ ভাবে জীবন যাপন করিতেন। বিলাসিতা বর্জ্জন ও ব্রহ্মচর্য্যপালন ছাত্র জীবনের প্রধান অঙ্গ। আর আজকাল আমরা বাল্য-বিবাহ করিয়া বা তাহার সহায়তা করিয়া শাস্ত্রের মর্য্যাদা হানি করিতেছি— বর্ণাশ্রম ধর্ম্মের বিরুদ্ধাচরণ করিতেছি। অর্থ-নীতি, স্বাস্থ্যনীতি ও নৈতিক জীবনের দিক দিয়া দেখিতে গেলে বুঝা যায় আমরা নিজের পায়ে নিজে কুঠারাঘাত করিতেছি। কবি গেয়েছেন, “বিয়ে হলেই পুত্র কন্যা, আসে যেন প্রবল বন্যা।” একে ৫/৭ শত বৎসরের দাসত্বের চাপে আমাদের সব সদ্গুণ গুঁড়া হইয়া গিয়াছে—তার উপর যদি স্ত্রীপুত্র লইয়া পরমুখাপেক্ষী হইয়া জীবনধারণ করিতে হয় তবে ‘স্বভাব নষ্ট’ হইবে তাহা আর বিচিত্র কি? বাল্য বিবাহ এক সময়ে আমাদের দেশে প্রচলিত ছিল সত্য কিন্তু সে সময়ের বাংলা আর বিংশ শতাব্দীর বাংলায় আকাশ পাতাল তফাৎ। তখন জীবনসংগ্রাম কঠোর ছিল না—সকলেই পেট ভরিয়া খাইতে পাইত। টাকায় ২০৷৷৹ সের দুধ ছিল না—মাছের সের ১৷৹ সিকা ছিল না—তরকারীর অগ্নিমূল্য ছিল না। গত ১০ বৎসরের মধ্যে টাকার মূল্য এক তৃতীয়াংশ (purchasing power) হইয়া গিয়াছে। বাড়ীভাড়া ও দুধের দাম দিতে কলিকাতাবাসীর প্রাণান্ত। অতি কদর্য্য বাড়ীতে মধ্যবিত্ত গৃহস্থকে বাস করিতে হয়।