যে দু’টী অমূল্য জিনিষের জন্য এখনও ট্যাক্সের বন্দোবস্ত হয় নাই— সেই বাতাস ও আলো, কলিকাতাবাসীদের পক্ষে এক প্রকার দুর্লভ। দিন দিন আমাদের জীবনীশক্তির হ্রাস হইতেছে। যক্ষ্মা, ম্যালেরিয়া সেই জন্য বাঙালী জাতিকে দিন দিন মৃত্যুর পথে লইয়া যাইতেছে। কাল কলিকাতাবাসী একজন ধনী, চিন্তাশীল ও সম্মানিত ব্যক্তি আমাকে একখানি পত্র দিয়াছেন। তাহাতে প্রসঙ্গক্রমে তিনি লিখিয়াছেন, “বাল্য-বিবাহ, বিলাসিতা, অর্থাভাব এবং বেকার-সমস্যার দরুণ আমরা বিবেকবুদ্ধি সমূলে নষ্ট করিয়া আত্ম-সম্মান হারাইয়াছি—এই চাটুকার জাতির প্রতি জগতের কাহারও শ্রদ্ধা থাকিতে পারে না।” আফিসে সাহেব সুবার কাছে এত লাঞ্ছনা ও গ্লানি সহ্য করিতে হয় কেন? কারণ, আমরা রোজগার-অক্ষম। একদিন বাড়ী বসিয়া থাকিলে হাঁড়ি চড়ে না। জীবনে স্বাধীনতা থাকিলে, স্বাবলম্বনের ভাবকে জাগ্রত করা যায়—মনুষ্যত্বের বিকাশ করিবার সুযোগ অন্বেষণ করা যায়। কিন্তু একবার স্ত্রীপুত্রের ভরণপোষণের বোঝা ঘাড়ে চাপিলে, স্বাবলম্বন হারাইয়া যায়—আত্মপ্রচেষ্টার অবসর কমিয়া যায়। এখানে অনেক যুবক উপস্থিত আছেন, যাহারা ইণ্টারমিডিয়েট বা বি, এ, পড়িতে পড়িতে বিবাহ করিয়াছেন। জিজ্ঞাসা করিলে বলেন, “কি কর্ব, বাবা ছাড়েন না, মার কষ্ট হয়” ইত্যাদি। বরিশালের অশ্বিনী বাবু বলেছিলেন—বিবাহের সময় বাংলার ছেলেরা মাতৃপিতৃভক্তি দেখাইবার সুবর্ণসুযোগ পায়। আমি বলি, আহা কি সেয়ানা ছেলে! বাপ মা বলিলেই বিবাহ করিবে? লেখা পড়া শিখিয়াছ বা শিখিতেছ—কেন, তুমি কি গরু না ঘোড়া যে ক্রেতাবিক্রেতার মধ্যে দরদস্তুর ঠিক হইলেই গলায় দড়ি দিয়ে হড়্ হড়্ করে টেনে নিয়ে বরের আসনে বসিয়ে দিবে? বিধাতা কি তোমায় কিছুমাত্র বিচারশক্তি দেন নাই। বিবাহের হাটে
পাতা:আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী.djvu/২১৭
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৮৬
আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী