সে ইংরাজ, আমেরিকাকে চোখ রাঙিয়ে কথা বলে। কিন্তু আমাদের স্থান কোথায়? আমরা যে এখনও নীচে পড়িয়া আছি তাহার একটা কারণ আত্মপ্রবঞ্চনা ও ব্যবসাদারী। আমাদের দ্বিধাবিভক্ত জীবনের বাইরের দৃশ্য যেমন সুন্দর, ভিতরের দৃশ্য তেমনি কুৎসিৎ। বাইরে—দেশোদ্ধার, সমাজ-সংস্কার, বিধবা-বিবাহ, জাতি-ভেদ রহিত, ছুৎমার্গ পরিহার, হিন্দু-মুসলমান ঐক্য প্রভৃতির আদর্শ লইয়া বক্তৃতা করিতে করিতে আকাশ বাতাস কম্পিত করি—আর ভিতরে, উত্তর-রাঢ়ী, বারেন্দ্র, বঙ্গজ, কাশ্যপ, শাণ্ডিল্য, ২৬ পর্য্যা, গঙ্গাস্নানের পুণ্যফল, একাদশীতে বিধবার নিরম্বু উপবাস ইত্যাদি অযৌক্তিক কপটাচারের প্রশ্রয় দিই।
ছেলে স্কুলে মাষ্টার মহাশয়ের নিকট শিখিয়া আসিল যে চন্দ্রের উপর পৃথিবীর ছায়াপাতে চন্দ্রগ্রহণ হয়। বাড়ীতে আসিয়া শুনিল, দিদিমা বলিতেছেন, রাহুদৈত্য চন্দ্রকে গ্রাস করে বলিয়া চন্দ্রগ্রহণ হয়—গ্রহণের সময় হাঁড়ি ফেলিতে হয়—কিছু খাইতে নাই—স্নান করিয়া শুদ্ধ হইতে হয়—ইত্যাদি। দিদিমা এক কথাতেই ছেলের যুক্তিতর্ক ঠাণ্ডা করিয়া দিলেন। বাঙালী ছাত্রের গোড়ার শিক্ষা এই প্রকার সুতরাং তাহার ভবিষ্যৎ জীবন যে দ্বিধা-বিভক্ত হইবে, তাহাতে আর আশ্চর্য্য কি?
বাঙালী জাতি ভারতবর্ষের আদর্শস্থানীয় বলিয়া আমরা গর্ব্ব করিয়া থাকি এবং মহামতি গোখেলের সার্টিফিকেট্ (‘What Bengal thinks to-day, India thinks to-morrow’) জাহির করিয়া আমাদের কথার সমর্থন করি। কিন্তু দুঃখের বিষয়, এই কথা এক সময় খাটিত, আজকাল খাটে না। সমাজ সংস্কার বিষয়ে একদিন বাঙালী অগ্রণী ছিল—আজ অন্যান্য দেশের তুলনায় পিছাইয়া পড়িতেছে।