কংগ্রেসের একজন নেতা, পরলোকগত পরমেশ্বর পিলে—"Representative Indians” নামে একখানা বই লিখেছেন। তাহাতে তিনি রাজা রামমোহন রায়, কেশবচন্দ্র সেন, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর প্রভৃতির জীবনী আলোচনা করিয়া বলিয়াছেন, সমাজ-সংস্কারকের জন্ম বাংলাদেশেই হইয়াছে। কিন্তু বর্ত্তমান বাঙ্গালী জীবনের দৈনন্দিন ইতিহাস ও কার্য্যপদ্ধতি আলোচনা করিলে মনে হয় সমাজ সংস্কার বাংলাদেশ ছাড়িয়া পলায়ন করিয়াছে। মনে ভাবুন—পর্দ্দাপ্রথা। ইহা ত মুসলমানদিগের নিকট হইতে ধার করা— ইহা হিন্দু ধর্ম্ম বা সমাজের সনাতন প্রথা নয়। দাক্ষিণাত্য, বোম্বাই, মধ্যপ্রদেশ, মহীশূর প্রভৃতি স্থানে—পর্দ্দাপ্রথা নাই বলিলেই হয়। এই সমস্ত দেশের উচ্চ ও সদ্বংশজাত মহিলারা স্বচ্ছন্দচিত্তে দলে দলে রাস্তায় ভ্রমণ করেন। প্রায় দেড় বৎসর পূর্ব্বে বোম্বাই নগরে অবস্থিতি কালে সমুদ্রতীরে সন্ধ্যার পর বেড়াইতে গিয়া দেখি, সেখানে মহিলারা অবাধে হাস্যালাপ করিতে করিতে সমুদ্রের বায়ু সেবন করিতেছেন। মান্দ্রাজে মহিলাদের কলেজ সমুদ্রের তীরে—এমন কি একটা প্রাচীর পর্য্যন্ত নাই। এই স্থানে অনেক গোঁড়াহিন্দুঘরের মেয়েরা লেখাপড়া শিখিয়া থাকেন—আর কলিকাতার মহিলারা বদ্ধ-বায়ু ও অন্ধকার ঘরের কোণে রাতদিন থাকিয়া স্বাস্থ্য নষ্ট করিয়া থাকেন। অসুস্থতার দরুণ কেহ কেহ কদাচিত মাঠের দিকে বেড়াইতে যান সত্য কিন্তু তাহাও সন্ধ্যার পর—নির্জ্জন রাস্তার ধারে এবং অতি সঙ্কুচিত ভাবে। আবরু বিষয়ে আমাদের গোঁড়ামি অন্যান্য প্রদেশের তুলনায় অনেক বেশী।
বিদ্যাসাগর মহাশয় দেশের জন্য আজীবন শক্তি, সামর্থ্য ও ধন উৎসর্গ করিলেন—আমরা বিদ্যাসাগরের মৃত্যুর দিনে তাঁহাকে স্মরণ করি বটে কিন্তু তাঁহার জীবনের প্রধান ব্রতকে কি আমরা প্রতিদিন