পাতা:আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী.djvu/২২৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১৯৪
আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী

সংস্কার বিষয়ে যথেষ্ট নৈতিক সাহস ও বীরত্ব দেখাইয়া গিয়াছেন, বিধবা দুহিতার বিবাহ দিয়াছেন—একটী পুত্রকেও “বর্ণ ব্রাহ্মণের” কন্যার সহিত বিবাহ দিয়াছেন। বিধাতা এক এক জনকে এমন প্রেরণা দেন যে তাঁহারা কাজ না করিয়া কিছুতেই নিরস্ত হয়েন না। তাঁহারা বেন প্রত্যাদিষ্ট হইয়া কর্ত্তব্য সম্পাদনের জন্য বদ্ধপরিকর হইয়া উঠেন। তখন যাঁহারা ইতস্ততঃ করিতেছিলেন—লাভ লোকসান বিচার করিতেছিলেন—তাঁহারা অনুবর্ত্তী হন। জগতের অধিকাংশই গড্ডালিকাপ্রবাহে গা ভাসাইয়া দেয়। ব্রাহ্ম-সমাজের আদি ইতিহাস যাঁহারা অবগত আছেন তাঁহারা জানেন, শিবনাথ শাস্ত্রী পিতামাতার একমাত্র পুত্ত্রসন্তান, কত আদরের জিনিষ ছিলেন—তিনি যখন ব্রাহ্মধর্ম্মে দীক্ষিত হইলেন তখন বাপমায়ের বুকে বাজ পড়িল। কিন্তু শিবনাথ যাহা কর্ত্তব্য বলিয়া বুঝিয়া ছিলেন তাহা হইতে বিচলিত হইলেন না। ব্রাহ্মসমাজের পরলোকগত নগেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, বিজয়কৃষ্ণ গোস্বামী প্রভৃতি যদি হিন্দু সমাজে থাকিতেন তবে লাভবান হইতেন—ভোগ-বিলাস ও বিভবের মধ্যে জীবন অতিবাহিত করিতে পারিতেন। কিন্তু কি নির্য্যাতনই তাঁহারা সহ্য করিয়াছেন, তবু কর্ত্তব্য-পথ হইতে বিচলিত হয়েন নাই। বাংলা দেশে অনেক পথপ্রদর্শক জন্মিয়াছেন—কিন্তু দুঃখের বিষয় আমরা আমাদের কর্ত্তব্য কার্য্য করিতেছি না। স্রোতস্বিনীর গতি রুদ্ধ হইলে উহা যেমন পঙ্কিল হইয়া উঠে ও তাহাতে নানাপ্রকার রোগাণু জন্মায় ও বৃদ্ধি পায়—তেমনই হিন্দুসমাজ এখন পঙ্কিল হইয়া উঠিয়াছে—এত বিষ সমাজদেহে জন্মাইতেছে ও প্রসারিত হইতেছে যে এরূপভাবে আর কিছু দিন চলিলে সমাজের মৃত্যু অনিবার্য্য। হিন্দু-সমাজ বিশিষ্টতা হারাইতেছে—উদারতা হারাইতেছে। উর্ব্বরমস্তিষ্ক-প্রসূত উপর চালাকির জন্য আমাদের মেরুদণ্ড বাঁকা হইয়া পড়িতেছে। মিথ্যার