পাতা:আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী.djvu/২৩৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২০৬
আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী

রেনেসাঁস যুগে প্যারিস নগরে হোমারভক্ত প্রোটেষ্টাণ্ট স্কালিগার আপন ঘরে পাঠে নিমগ্ন; এদিকে বাহিরে হত্যাকাণ্ড হয়ে গেল Massacre of St. Bertholomew); কত প্রোটেষ্টাণ্টকে খুন করা হ’ল, কিন্তু তিনি এমনই তন্ময় যে হত্যাকাণ্ডের ব্যাপার তার পরদিন জান্‌লেন। এথেন্সের সৈন্যদলভুক্ত হয়ে জ্ঞানীশ্রেষ্ঠ সক্রেটিস একটানা ২৪ ঘণ্টা নিস্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে চিন্তা করতেন, তবেই ত দুরূহ তত্ত্বসমূহের মীমাংসা পেতেন। গ্রীকদর্শনের তিনি শ্রেষ্ঠ গুরু। প্লেতো তাঁর শিষ্য। ভাষাতত্ত্ববিদ্‌ বুদিয়স্এর বিবাহদিনে গির্জায় কনে এসেছেন, অন্যান্য বরযাত্রী ও কন্যাযাত্রীও উপস্থিত হয়েছেন। কিন্তু বর কোথায়? বরকে ত খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তখন বরের পাঠগৃহে গিয়ে দেখা গেল তিনি ভাষাতত্বের আলোচনায় মগ্ন আছেন। যাঁর বিয়ে তাঁর মনে নেই। রোমান্‌ সৈন্য যখন আর্কিমিডিসকে খুন কর্‌তে এসেছে তখন আর্কিমিডিস বল্‌লেন— দাঁড়াও একটু, এ বৃত্তটা নষ্ট ক’রে দিও না, এ প্রমাণটা শেষ করি। বর্ব্বর সৈনিক তাঁকে খুন ক’রে জগতের মহৎ সত্য উদ্‌ঘাটনের পথ হয়ত রুদ্ধ ক’রে দিয়ে গেল। এমনই ক’রে আপনহারা হয়ে সাধনা না কর্‌লে কি কেউ কখনও কোন সাধনায় সিদ্ধিলাভ করেছে?

 এই নিঃস্বার্থ সাধনায় সকলেই মুগ্ধ হয়েছে। যেখানে স্বার্থপরতা সেখানেই সঙ্কোচ—স্বার্থপর ক্রোড়পতির কেউ সংবাদ লয় না। কিন্তু তাঁর অর্থ যখন ‘জনহিতায়’ ব্যয় হয়, তখন তিনি হন শ্রেষ্ঠ ও মান্য। জ্ঞানসাধকের সাধনলব্ধ যা-কিছু তা পৃথিবীর সকলেরই সম্পত্তি। তাই তাঁরা সকলেরই বড় আপনার জন। কিন্তু আমরা নষ্ট হয়েছি সাধনার অভাবে, সঙ্কুচিত হয়েছি স্বার্থপরতার প্রভাবে। তাই বিদ্যাক্ষেত্রে, ব্যবসাক্ষেত্রে সব ক্ষেত্রেই আমরা হ’টে গিয়ে