পাতা:আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী.djvu/২৩৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
সাধনা ও সিদ্ধি
২০৭

পিছনে প’ড়ে গেছি। সর্ব্বনাশকারী পল্লবগ্রাহিতা আমাদের নষ্ট করেছে। ৺প্রতাপ মজুমদার বল্‌তেন “জাপানীরা অপেক্ষাকৃত হাঁদা, বাঙালী অতি বুদ্ধিমান।” সেইজন্যই বাঙালী আজ দুর্দ্দশাগ্রস্ত। আত্মঘাতী উদ্যমহীনতা আমাদিগকে স্বল্পায়াসে কৃতকার্য্যতা লাভ কর্‌তে চেষ্টিত করে। তাই আজ সব ক্ষেত্রেই চাই সাধনা। অন্নসমস্যা, বস্ত্রসমস্যা, অর্থসমস্যা, স্বাস্থ্যসমস্যা প্রভৃতি নানাসমস্যায় প’ড়ে আমরা সব রকমে মাটি হয়ে যেতে বসেছি। এখন দৃঢ় প্রতিজ্ঞা সহকারে লেগে প’ড়ে থেকে এক একটি সমস্যার মীমাংসা কর্‌তে না পারলে আমাদের আর বাঁচ্‌বার আশা নেই।

 আর একটা কথা। আমাদের সর্ব্বদা স্মরণ রাখ্‌তে হবে চেষ্টামাত্রেই অথবা কিছুদিনের চেষ্টাতেই যে এই সকল কঠিন সমস্যার মীমাংসা হ’য়ে যাবে তা কখনই নয়। সুতরাং কাজ আরম্ভ ক’রেই ফলের আকাঙ্ক্ষ কর্‌লে চল্‌বে না। মনে রাখ্‌তে হবে, প্রয়াসসাধ্য সকল কার্য্যেই করার আনন্দটাই মুখ্য, পাওয়ার আনন্দ নয়; মৃগয়ায় যেমন অন্বেষণেই আমোদ, তেমনি প্রকৃতির গূঢ়রহস্য যাঁরা উদ্‌ঘাটন করেন তাদের সেই চেষ্টাতেই অপার আনন্দ। আজ আমাদের তাই এই প্রচেষ্টার আনন্দের আস্বাদ গ্রন্থণ কর্‌তে হবে। জর্ম্মান দার্শনিক লেসিং সম্বন্ধে একটা কথা আছে যে যদি ঈশ্বর এসে তাঁকে বল্‌তেন—তুমি সত্য চাও না সত্যের সন্ধান চাও, তবে তিনি জবাব দিতেন—আমি সত্যের সন্ধান চাই, কিসে পাব, কেমন করে পাব, এই সে দেখা দেবে, পরক্ষণে আড়ালে লুকোবে; এই খোঁজের খেলার বিপুল আনন্দে আমি ভরপুর হ’য়ে থাক্‌তে চাই। এই ত প্রাণবন্তের লক্ষণ; বাস্তবিক আনন্দ প্রাপ্তিতে নয়, অন্বেষণে আর এই অন্বেষণ বা সাধনা একই কথা।

 ধর্ম্মজগতে বুদ্ধ, যীশু, মোহম্মদ, চৈতন্য এঁদের সিদ্ধিলাভের ইতিবৃত্ত