রক্ষা করাই যেন বিদ্যাশিক্ষার মুখ্য উদ্দেশ্য হইয়া দাঁড়াইয়াছে। বাস্তবিক এ বিষয়ে আলোচনা করিলে দেখা যায় যাঁহারা যৌবনকালে বিশ্ববিদ্যালয় হইতে ফার্কতনামা লইয়া বিদায় হইয়াছেন তাঁহাদের মধ্যেই প্রকৃত প্রস্তাবে অনেকের প্রতিভার বিকাশ দেখিতে পাওয়া গিয়াছে। এখনি কয়েকটী নাম আমার মনে আসিতেছে। কেশবচন্দ্র সেন, প্রতাপচন্দ্র মজুমদার, নলিনবিহারি সরকার, কালীপ্রসন্ন ঘোষ, শিশিরকুমার ঘোষ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, রাজেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় এই সকল ক্ষণজন্মা পুরুষ স্ব স্ব ক্ষেত্রে যে প্রকার অসাধারণত্ব দেখাইয়াছেন, জিজ্ঞাসা করি কয়জন উপাধিধারী তাহা পারিয়াছেন? এস্থলে ইহা বুঝিতে হইবে না যে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ শিক্ষার বিরোধী; আমার বক্তব্য এই যে অন্যান্য সুসভ্য দেশের ন্যায় সকলেই মোটামুটি—যিনি যতদূর পারেন সকলেই স্কুলে বিদ্যাভ্যাস সমাপন করিয়া নানা ক্ষেত্রে, বিশেষতঃ বাণিজ্য ব্যবসায়ে প্রবৃত্ত হইবেন। অবশ্য একেবারেই ভূঁইফোড় হইয়া রামদুলাল সরকার হইবেন এ কথা বলি না; কিন্তু মাড়োয়ারীদিগের ন্যায় শিক্ষানবিশ (apprentice) হইয়া বাণিজ্যক্ষেত্রে ঢুকিবেন। কারণ সকল ক্ষেত্রেই শিক্ষানবিশির একটা মূল্য আছে। না-পড়িয়া পণ্ডিত হওয়ার মত ভয়ঙ্কর জিনিস আর কিছুই নাই। বিশেষতঃ ব্যবসায় ক্ষেত্রের উত্থান পতন অতি ভয়ানক; যে কাজ এত গভীর দায়িত্বপূর্ণ সে কাজে প্রবৃত্ত হইবার পূর্ব্বে একটু শিক্ষার দরকার একথা বুঝাইয়া বলিবার দরকার করে না। অল্পদিনের মধ্যেই অনভিজ্ঞ লোকের ব্যবসায় চেষ্টা নিষ্ফল হইয়া যায়, তাহার দৃষ্টান্ত খুঁজিবার জন্য বেশি দূর যাইতে হইবে না। সুতরাং এ শিক্ষাকে কিছুতেই উপেক্ষার ভাবে দেখিতে বলিতে পারি না।
পাতা:আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী.djvu/২৫০
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বঙ্গীয় যুবক-সম্প্রদায়ের ভবিষ্যৎ জীবিকা-অর্জ্জন
২১৯