মোট কথা এই, যে ছেলে পাঠ্যতালিকাভুক্ত পুস্তকের বাহিরে যত খবর রাখিবে আমি সেই ছেলেকে তত বাহবা দিব। অর্থাৎ যে শিক্ষার দ্বারা স্বাভাবিক প্রতিভার স্ফুরণ হয় ও ব্যক্তিগত স্বাতন্ত্র্য বজায় থাকে, ও মৌলিকতা ও উদ্ভাবনী শক্তির উন্মেষ হয় তাহাই প্রকৃত শিক্ষা। আমার নিজের জীবনস্মৃতির কথা বলিতে আমি বড়ই সঙ্কুচিত হই, কিন্তু একটা কথা প্রসঙ্গক্রমে বলিতে হইতেছে। আমি যখন হেয়ার স্কুলের চতুর্থ শ্রেণীতে পড়িতাম তখন একবার দুরন্ত আমাশয় রোগে আক্রান্ত হইয়া এক বৎসর ভুগি। সম্পূর্ণ সুস্থ হইতে প্রায় দুই বৎসর লাগিয়াছিল। এই দুই বৎসর বাধ্য হইয়া আমাকে বাড়ীতে আবদ্ধ থাকিতে হয়। ঐ সময়ে লাটিন, ফরাসী ইত্যাদি ভাষা আয়ত্ত করি। বঙ্গদর্শনে রামদাস সেন প্রমুখ ব্যক্তিগণ যে প্রত্নতত্ত্বঘটিত প্রবন্ধ লিখিতেন আমি তাহা আগ্রহের সহিত পাঠ করিতাম। সেই অল্প বয়সে আমার মনে ঐ যে ঐতিহাসিক অনুসন্ধিৎসার প্রতি আগ্রহ হইয়াছিল তাহা বহুকাল ভস্মাচ্ছাদিত বহ্নির ন্যায় গুপ্ত থাকিয়া হিন্দুরসায়ন শাস্ত্রের ইতিহাস লিখিবার সময় পুনর্ব্বার প্রকাশিত হয়। বাল্যের সেই যে প্রবৃত্তি বদ্ধমূল হইয়াছিল তাহাই উত্তরকালে কিয়ৎ পরিমাণে কার্য্যকরী হইয়াছে।
প্রকৃত শিক্ষা কিরূপ সে সম্বন্ধে আলোচনা করিতে গিয়া আমার এত কথা মনে আসিতেছে যে দুই এক কথার মধ্যে তাহা শেষ করা অসম্ভব। শিক্ষার উদ্দেশ্য মানুষ তৈয়ারি করা অর্থাৎ শারীরিক, মানসিক ও নৈতিক বৃত্তিগুলি যথোচিতরূপে পরিস্ফুট করিয়া তোলা। কি উপায়ে তাহা নিষ্পন্ন হইতে পারে তদ্বিষয়ে প্রাচীনকাল হইতে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য মনীষীগণ মাথা ঘামাইয়া আসিতেছেন। তাঁহাদের চিন্তাপ্রসূত যে সকল অমূল্য গ্রন্থরাজি রহিয়াছে প্রত্যেকের কর্ত্তব্য