বিজ্ঞাপন দিয়েছে, মাসিক ৫০৲ টাকা। দেখুন কি ব্যাপার দাঁড়িয়েছে। বড় ষ্টেশনে রেলের মুটে মাসে ৫০৲ রোজগার করে। যশোর জেলার শ্রমজীবী গ্রীষ্মকালে পোস্তা থেকে আম কিনে ‘গোপালভোগ’ ‘ক্ষীরভোগ’ নাম দিয়ে দিনের বেলা বেচে। আর রাত্রে বেচে বরফ। এতে তারা একজন গ্রাজুয়েটের চেয়ে বেশী রোজগার করে। এ বিষয় আর কত বলবো! এখন অর্থাগমের নূতন পথ খুলতে হবে, শুধু পাশ করলে চলবে না। বেঙ্গল কেমিক্যালে প্রথম যিনি ৭৫৲ টাকা পেতেন তিনি এখন ১০০০৲ টাকা পাচ্ছেন। গত বৎসর কারখানার কয়েকজন উচ্চশ্রেণীর রাসায়নিককে পরিচালকগণ যথেষ্ট টাকা পুরস্কার দিয়েছেন। ‘Knowledge is power’, “বুদ্ধির্যস্য বলং তস্য” শুধু মুখে ব’ল্লে কি চলে? বিদ্যার জোরে য়ুরোপ এত কর্লে; আমরা কি পাশকরা ছাড়া কিছুই কর্তে পারি না? লেখা পড়া শিখে আমরা কি কেরানী ছাড়া আর কিছুই হ’তে পারি না? যদি এম্নি ক’রে শিক্ষার অপব্যবহার কর্তে থাকি তবে আমাদের দুর্গতির শেষ কোথায়? কলিকাতার যত লোকসংখ্যা তার প্রায় তৃতীয়াংশ অ-বাঙ্গালী (non-Bengalee)—অর্থাৎ শুধু ইউরোপীয় নয়— মাড়বারী—ভাটিয়া—দিল্লিওয়ালা—হিন্দুস্থানী—ওড়িয়া—চীনে প্রভৃতি লাখে লাখে ঝাঁকে ঝাঁকে এসে বাঙ্গালীর মুখের গ্রাস কেড়ে নিচ্ছে। ব্যবসা বল—বাণিজ্য বল—যত রকম অর্থাগমের প্রকৃষ্ট উপায় সমস্তই বিদেশীর হাতে সঁপে দিয়ে আমরা অদৃষ্টের ঘাড়ে সমস্ত দোষ চাপিয়ে হাত পা গুটিয়ে ব’সে আছি—আর শিক্ষিত এই ভান ক’রে উপবাসে ক্লিষ্টদেহে দিন কাটাচ্ছি।
পাতা:আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী.djvu/৩০৪
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পাঠাগার ও প্রকৃত শিক্ষা
২৭৩