পাতা:আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী.djvu/৩১৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
অধ্যয়ন ও জ্ঞানলাভ
২৮৭

চাই। ইউনিভারসিটির বাঁধা বই পড়লে বা গোটাকতক পাশ কর্‌লে প্রতিভার বিকাশ হয় না। হালিসহরে রামপ্রসাদ জন্মেছিলেন, তাঁর কথা সবাই জান। তিনি হিসাব লেখার এক চাক্‌রি পেয়েছিলেন, কিন্তু খাতার পিঠে পিঠে কালী-সংকীর্ত্তন লিখতেন। এমন কি ভারতের যে দুজন জগতে অসাধারণ কীর্ত্তি অর্জ্জন করছেন, রবীন্দ্রনাথ ও রামানুজম্ (ইনি সম্প্রতি রয়েল সোসাইটির সভ্য হয়েছেন) তাঁদের কেহই ইউনিভার্‌সিটির এডুকেশনের ধার ধারেন না, তাঁরা পাশ-করা নন। কিন্তু এই পাশ না কর্‌তে পার্‌লেই আমাদের ছেলেদের মুখ আঁধার। মা বলেন— পোড়াকপাল আমার, ছেলে পাশ হলো না!) আবার সময় সময় ছেলে আত্মহত্যা ক’রে বসে। আমি বলি—তোমার যা ভাল লাগে তাই কর। উৎসাহের সহিত একটা নূতন কিছু আরম্ভ করে দাও। কারণ উকিল ডাক্তার ও কেরাণী এই নিয়ে জাতি টেঁকে না। আমাদের চরম দুর্গতি হয়েছে। এখন আমাদের নানা বিষয়ে, অর্থকর বিষয়ে, ব্যবসাবাণিজ্যে মন দিতে হবে। এ সম্বন্ধে আমি আমার লিখিত “বাঙ্গালীর মস্তিষ্ক ও তাহার অপব্যবহার” নামক পুস্তিকায় কয়েকটা কথা লিখেছি, তোমরা সেটা পড়ে দেখো। আমাদের অবস্থা দেখে মনে হয় বিধাতা যেন বলেন, “বাঙ্গালীর ছেলে, শরীর নষ্ট কর্‌বি আর কেরাণীগিরি কর্‌বি; তার বেশী কিছুই নয়।” এ অবস্থায় থাকলে চল্‌বে না, এ জীবনের পথ নয়, মৃত্যুর পথ; এ পথ থেকে ফির্‌তেই হবে।