বিদ্যালয়ে ছাত্রের স্থান সঙ্কুলান হয় না। সেখানে গিয়া একটা অদ্ভুত দৃশ্য দেখিয়া আসিয়াছি। আমাকে এক জায়গায় স্কুলের কর্ত্তৃপক্ষ সদর রাস্তায় লইয়া গেলেন। সেনাপতি যেমন সৈন্য পরিদর্শন করেন, সেইরূপ দেখিলাম প্রায় ১০ হাজার নিম্ন প্রাথমিক ছাত্র-ছাত্রী সারি দিয়া আমার সম্মুখ দিয়া চলিয়া গেল। আমেদাবাদে এক জায়গায় একটী উচ্চ শ্রেণীর জাতীয় বিদ্যালয়ে দুই হাজার ছাত্র পড়ে। ইহার কারণ অন্য কিছু নয়, কেবল গুজরাটে সকলেই ব্যবসায়ী। ব্যবসাই তাহাদের অবলম্বন। মাড়োয়ারী, ভাটিয়া, গুজরাটীদের জিজ্ঞাসা করুন—লেখাপড়া শিখিয়া কি চাকুরী করিবে? তাহারা বলিয়া বসিবে—আমরা কি বাঙ্গালী বাবু যে চাকুরী করিব, নোক্রী করিব? হয়ত আপনাকে প্রহার করিতে আসিবে। গুজরাটে, আমেদাবাদে ও বোম্বাইএ কাপড়ের কলের মালিকগণ যুদ্ধের সময় শতকরা ১৫০/২০০৲ টাকা মুনফা পাইয়াছে। শ্রীযুক্ত নরোত্তমদাস মোরারজি শোলাপুরের একটী কলের ম্যানেজিং এজেণ্ট, তিনি অংশীদারগণকে শতকরা হাজার টাকা মুনফা দিয়াছেন। বাংলার ধন কি? যদি এক বৎসর অজন্মা হয়, প্রজা খাজনা না দেয়, তবে কতজন জমিদার আছেন, যাঁহারা “মহামহিম শ্রী—” না লিখিয়া থাকিতে পারেন? এই ত আমাদের দেশে বর্দ্ধমান মহারাজার নীচেই কাশিম বাজারের মহারাজা। তিনি এক কোটী টাকার জন্য একটী ইউরোপীয় কোম্পানীর নিকট জমিদারী বন্ধক দিতে বাধ্য হইতেছেন। বোম্বাইয়ে এমন অনেক ব্যবসায়ী আছেন, যাঁহারা এককোটী টাকার চেক্ হাসিতে হাসিতে দিতে পারেন। বাঙ্গালী যদি জীবন সংগ্রামে জয়লাভ করিতে চায়, তবে তাহাকে ব্যবসা অবলম্বন করিতে হইবে। বাংলার যা কিছু রক্ত, যা কিছু সার তাহা বিদেশীগণ শোষণ করিয়া লইতেছে। বাংলার
পাতা:আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী.djvu/৩২৩
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৯২
আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী