পাতা:আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী.djvu/৩২৭

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৯৬
আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও ৰক্তৃতাবলী

আর আমরা কলমপেশা হইতেছি কেন? লজ্জাই আমাদের সর্ব্বনাশের কারণ। আমরা এমন বিলাসী যে একটা ইলিশ মাছ বাজারে যদি ৷৷৵০ আনায় কিনি তবে কুলী করিয়া আনিতে ৵৹ লাগে। আর যদি রাত্রি হয় তাহা হইলে এ দিক ওদিক তাকাইয়া চোরের মত কোনওরূপে ঘরে লইয়া আসি। এ দিকে দেখুন, সাহেবেরা কেমন শ্রমী, তাহারা nation of shop-keepers বটে কিন্তু তাহারা nation of beggars নহে। তাহারা কেমন জামার আস্তিন গুটাইয়া মই লইয়া ক্রেতাদের মন যোগাইবার জন্য হাজার হাজার জিনিস দেখাইতেছে। কোনওরূপে পছন্দ করাবেই—জিনিস কিনাবেই। তাহারা কোনওরূপেই ক্রেতাকে অসন্তুষ্ট করে না। আমরা মেসে থাকি, ৬।৭ টাকা ঘরভাড়া দেই, বিবাহের বরযাত্রীর মত আমরাও ঘরের মধ্যে পড়িয়া থাকি, মাছ হোমিওপ্যাথিক ডোজে খাই, ডালও যা খাই তা গঙ্গার জলের ন্যায় পাত্‌লা। আমি প্রতিভাশালী ছাত্রদের উচ্চ শিক্ষার বারণ করি না। জমিদারের ছেলেরা সকলেই উচ্চশিক্ষা করিলে তাহাদের জমিদারী দেখিবে কে? তাহারা চাকুরীর জন্য দেশ ছাড়িয়া চলিয়া গেলে দেশের কল্যাণ হইবে কি করিয়া? শরৎ চট্টোপাধ্যায়ের “পল্লীসমাজ” পড়িলে পল্লীগ্রামের অবস্থা বেশ বুঝা যায়। অশিক্ষিত লোক দেশে বসিলে কেবল মামলা মোকদ্দমার সৃষ্টি করে এবং সমাজের দোহাই দিয়া একে অন্যকে এক ঘরে ইত্যাদি করিয়া বাঙ্গালী মস্তিষ্কের অপচয় করিয়া থাকে। যাহারা ইংরাজী শিক্ষা করে তাহারা কেবল চাকুরী, চাকুরী ক’রে ৩০৲ মাহিনায় বিদেশে উপবাস কমিবে তবুও পল্লীগ্রামে থাকিবে না। সৌভাগ্য যে এখন আর চাকুরী মিলিতেছে না। জাতীয়ভাবে ছাত্রদিগকে শিক্ষিত করিয়া আমাদের যুবকগণের চাকুরীর মোহও নষ্ট করিতে হইবে।