পাতা:আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী.djvu/৩৩১

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩০০
আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী

নিকট নিজের বাস্তুভিটা বন্ধক দেওয়ার মত হইল। আমি এ বিশ্বপ্রেম চাই না। আমি বাঙ্গালী, আমার অন্ন সকলে কাড়িয়া খাইতেছে। ভাটিয়া, দিল্লীওয়ালা, মাড়োয়ারী, পাঞ্জাবী, উড়িয়া, সকলে বাঙ্গালীর মুখের গ্রাস কাড়িয়া খাইতেছে। কেবল বাঙ্গালী 'হা অন্ন' 'হা অন্ন' করিয়া মাথায় হাত দিয়া কাঁদিতেছে। যদি ৩০ কোটী টাকা বৎসরে বৎসরে বাংলা দেশ হইতে বাহির করিয়া না দিয়া ঘরে ঘরে চরকা, ঘরে ঘরে তুলার চাষ করি, তবে আমাদের অবস্থা অনেক উন্নত হইবে। তমলুকে দেখিলাম কত সুন্দর স্বন্দর চরকার সূতার কাপড় হইয়াছে। আমি বিশ্বাস করিতে পারি নাই যে সেগুলি চরকার সূতার কাপড়। ক্রমশঃ তাঁতির হাত আরও পাকিবে। ঢাকাই কাপড় কত ভাল ছিল। যে দেশে এমন সূক্ষ্ম কাপড় হইত, যে দেশের মসলিন রোম হইতে সারা ইউরোপ হইতে টাকা লুটিয়া আনিত আজ সে দেশের লোক দিগম্বর সাজিয়াছে। আমরা এমনই অপদার্থ। কবির কথায়,— “তাতি কর্ম্মকার করে হাহাকার, সাজ দিগম্বরের বেশ।”

 দুই বৎসর পূর্ব্বে বোম্বাইতে মহাত্মার সঙ্গে যখন আমার দেখা হয় তখন তাঁহার কাছে আমি বলিয়া আসি যে আমি খদ্দর প্রচার করিব। সেই মহাত্মাজী আজ কারাগারে। আমাদের সেজন্য প্রত্যেককেই শোকচিহ্ন ধারণ করিতে হইবে। ইংরাজীতে যাহাকে বলে “The whole nation is in mourning.”, খদ্দরই সে শোকচিহ্নের পরিচায়ক হওয়া আবশ্যক। আমাদের এক ফসলের দেশ। ৮|৯ মাস লোকে হাত পা গুটাইয়া বসিয়া থাকে। ফসল না হইলে অনাহারে মৃত্যু বা ঋণে জর্জ্জরিত কিন্তু তবুও তাহারা খাটিবে না। কিন্তু কলিকাতার ভাটিয়া, মাড়োয়ারী, যাহাদিগকে লক্ষপতি বলিলে অপমান করা হয়, তাহাদের একটুও সময় নাই। এই তমলুক