পাতা:আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী.djvu/৩৪৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩১৫
জাতিভেদ ও তাহার প্রায়শ্চিত্ত

বাঙ্গালাদেশে আনয়ন করেন, এইরূপ প্রবাদ আছে। সেই পঞ্চ ব্রাহ্মণ হইতে বর্ত্তমান কুলীন ব্রাহ্মণের উৎপত্তি। বলা বাহুল্য যে, সেই ব্রাহ্মণগণ তাঁহাদের পত্নীগণকে সঙ্গে আনিয়াছিলেন কিনা তাহা জানা নাই। তৎপরে বল্লালসেন কৌলিন্য প্রথার প্রবর্ত্তন করিয়া বঙ্গের তথাকথিত উচ্চজাতিগুলির মধ্যেও উপজাতির সৃষ্টি করেন এবং তখন আমাদের দেশে জাতিভেদের ভিত্তি সুদৃঢ়রূপে স্থাপিত হয়। এখন আমরা আমাদের চতুর্দ্দিকে নানা প্রকার “জাতি” দেখিতে পাই, বাঙালাদেশের ৩৬ জাতির কথা সকলেই অভিজ্ঞাত। কিন্তু হিসাব করিয়া দেখিলে এই সংখ্যা ৬০।৭০ এরও অধিক। অথচ এতগুলি জাতির মধ্যে জাতি ও বর্ণ অনুসারে কোন বৈষম্য নাই! নৃতত্ত্বের দিক্ (ethnologically) দিয়া দেখিতে গেলে একজন নমঃশূদ্র ও একজন ব্রাহ্মণের মধ্যে বিশেষ কোন পার্থক্য বুঝিতে পারা যাইবে না। এক সময়ে বাঙালাদেশে বৌদ্ধমত অত্যন্ত বিস্তার লাভ করিয়াছিল—প্রায় হাজার বৎসর ধরিয়া বাঙালাদেশে বৌদ্ধ প্রভাব বর্ত্তমান ছিল; তৎকালে জাতিভেদের বাঁধন শিথিল হইয়া পড়ে। কিন্তু ব্রাহ্মণ্য ধর্ম্মের পুনরুত্থানের সঙ্গে সঙ্গে জাতিভেদ আবার তাহার সমস্ত কঠোরতা লইয়া ফিরিয়া আসে।

 বর্ত্তমানে বাঙালাদেশে শতকরা ৫০ জনেরও অধিক মুসলমান। অথচ এই মুসলমানদিগের মধ্যে শতকরা ৯৯ জন লোকের শরীরে হিন্দুর রক্ত। আজ যে বাংলাদেশের এই শতকরা ৫০ জনেরও অধিক মুসলমান—ইহার কারণ হিন্দু সমাজের কঠোরতা। জাতিভেদের কঠোর বন্ধনে, হিন্দু সমাজকে আমরা সঙ্ঘবদ্ধ করিতে যাইয়া তাহাকে কেবল পঙ্গুই করিয়াছি। এই শতকরা ৯৯ জন মুসলমান—যাহাদের রক্ত হিন্দু ও ভাষা বাংলা—তাহারা আমাদেরই অত্যাচারে জর্জ্জরিত হইয়া ইসলামের উদার বক্ষে আশ্রয় লইয়াছে। মুসলমান সমাজ মানুষকে