প্রয়াস পায়; পরম স্নেহাস্পদ বৎসটির গাত্র স্নেহনিদর্শনস্বরূপ অবহেলন করে। এই প্রকার জীবন-যাত্রা নির্ব্বাহ করাই কি মানবের উদ্দেশ্য? আহার, বিহার, নিদ্রাই কি ঈশ্বর-সৃষ্ট শ্রেষ্ঠজীবের কেবল একমাত্র কর্ত্তব্য? আপনার গণ্ডীর ভিতর আবদ্ধ থাকিয়া নিষ্ফল সস্বার্থ-গবেষণায় কালাতিপাত করা, জাড্যভিমান, পাণ্ডিত্যাভিমানে স্ফীত হইয়া উচ্চ নীচের কল্পিত ভেদাভেদকে গভীরতর করা, আর মানবজাতির সাধারণ সম্পত্তি স্বাধীন চিন্তাকে বিসর্জ্জন দিয়া, দুর্ব্বোধ শ্রুতি ও স্মৃতির টীকাকরণে মস্তিষ্কের প্রখরতা ক্ষয় করা কি বিধাতার অভিপ্রেত? পরম করুণাময় পরমেশ্বর কি মানুষকে জ্ঞান, ধৃতি, ক্ষমা ইত্যাদি দুর্ল্লভ গুণালঙ্কৃত করিয়াও এতদপেক্ষা মহত্তর চরিত্র ও অনুষ্ঠান দাবী করেন না?
সহস্রাধিক বৎসরের ইতিহাস এই সাক্ষ্য দেয় যে, সমগ্র ভারতবাসী অহিফেনদেবীর ন্যায় জড়, নিস্পন্দ ও অসাড় হইয়া পড়িয়া আছে। জগতের ইতিহাস পর্য্যালোচনা করিলে এই দেখিতে পাওয়া যায় যে, যখন যে জাতি এই প্রকার হীনাবস্থায় পতিত হয়, তখন পুরাতনের প্রতি একটা অযথা অতিরিক্ত শ্রদ্ধা স্থাপন করে, এবং আত্মশক্তির উপর সম্পূর্ণরূপে বিশ্বাসহীন হইয়া পড়ে। অনন্ত পরিবর্ত্তনশীল জগতের পরিবর্ত্তনের সঙ্গে সঙ্গে কত সামাজিক প্রথা ও ব্যবস্থা পরিবর্ত্তিত হইতেছে। কালের চঞ্চল স্রোতে, পার্থিব জগতে যেমন যুগান্তর উপস্থিত হইয়াছে, মনোজগতেও যে তাদৃশ বিপ্লব স্বাভাবিক, ইহা অন্ধবিশ্বাসচালিত হইয়া সে জাতি বুঝিতে পারে না। তখন কি এক মোহিনী শক্তি আসিয়া হৃদয়দ্বার চাবি বন্ধ করিয়া চলিয়া যায়, সত্যের ও বিচারের সহস্র কুঠারাঘাতেও তাহা ভাঙ্গে না। যখন মানব-সমাজ এই প্রকার তমসাচ্ছন্ন হয়, তখন শাস্ত্র অভ্রান্ত বলিয়া স্বীকৃত হয়—পথ দেখিবার আলোকের অভাবে ঋষিবাক্য বর্ত্তিকাস্বরূপ গৃহীত হয়। আমাদেরও তাহাই ঘটিল। প্রত্যুষ হইতে