সমাজ এক বিশাল সাগর বিশেষ,—ইহার প্রত্যেকটি জাতি এক একটি দ্বীপ, একের সহিত অন্যের কোন সম্পর্ক নাই। কাজেই বিভিন্ন শ্রেণীর,ভিতর আন্তরিকতার একান্ত অভাব। ব্রাহ্মণই সুধু দেবমন্দিরে প্রবেশ করিতে অধিকারী, কায়স্থ প্রাঙ্গণ হইতে দর্শন করিবে, শূভ্র অস্পৃশ্যকে মন্দিরের শতহস্ত দূর হইতেই দেবতার কৃপা লাভ করিতে হইবে। অথচ আমরাই বলি সর্ব্বভূতেষু নারায়ণঃ! উচ্চশিক্ষিত যাঁহারা তাঁহারাও কি এ সমস্ত বুঝিয়াও বুঝিতে চাহেন না? মানুষে মানুষে এই প্রকার ভেদের প্রাচীর তুলিলে আন্তরিকতা কোথা হইতে আসিবে?
বাঙ্লায় হিন্দু-মুসলমান, মাদ্রাজে ব্রাহ্মণ-অব্রাহ্মণ প্রভৃতি সমস্যা অতি দারুণ। এই সমস্ত সমস্যার সমাধান না হওয়া পর্য্যন্ত আমরা কেবলই দেশের চারিদিকে ক্ষুদ্র বৃহৎ নানা সমস্যা দেখিতে পাইব। দেশাত্মবোধ কিছুতেই জাগ্রত হইতে পারিবে না।
জাতিভেদের পাপের ফলে হিন্দু আজ মরণোন্মুখ। বাংলায় সমস্যা উঠিয়াছে—হিন্দু বাঁচিবে না মরিবে? একটি জাতি কতদূর অধঃপতিত হইলে তাহার মরণ-বাঁচনের প্রশ্ন উঠে? হিন্দু সমাজের ললাটে যে মৃত্যুর কাল ছায়া ঘনাইয়া আসিয়াছে ইহা আমাদের বহুযুগসঞ্চিত পাপের,অবশ্যম্ভাবী ফল। মানবের আত্মাকে অপমান করিয়া আজ ভারত অপমানিত।
“হে ভারত—যাদের করেছ অপমান
অপমানে হতে হবে তাদের সমান।”
তাই আমরা আজ সমাজের এই বৃহৎ অংশকে অস্পৃশ্য করিয়া নিজেরাই জগতের নিকট অস্পৃশ্য হইয়া গিয়াছি। এ পাপের প্রায়শ্চিত্ত না করিয়া বিরাট মানব-সমাজের দরবারে উন্নতমস্তকে আমাদের প্রবেশ করিবার অধিকার নাই।