এখন কথা হচ্চে এই যে আমরা ‘বাঙ্গালী জাতি’, ‘ইণ্ডিয়ান নেশন’ বলে চীৎকার করি, একটা গোটা জাতি বলে জগৎ সমক্ষে পরিচয় দেই। কিন্তু জাতির ভেতর কত রকম গলদ, কত দুর্ব্বলতা রয়েছে, তা একবার স্থিরচিত্তে ভেবে দেখতে হবে। মানুষ মানুষের হাতে খাবে না, মানুষ মানুষের ছায়াটি পর্য্যন্ত মাড়াবে না, একথা বাইরের লোকে স্বপ্নেও ভাবতে পারে না। হিন্দু ভারতের বাইরে এসব কথা লোকে ধারণাই কর্ত্তে পারে না; কোন ভীল,সাঁওতাল, গারো—তাহারা পর্য্যন্ত ধারণা কর্ত্তে পারে না, মানুষ মানুষকে ছুঁলে অপবিত্র হয় কিরূপে। মহাত্মা গান্ধী বলিয়াছেন যে উচ্চশ্রেণীর হিন্দুরা কুকুরকেও কোলে করে আদর করে কিন্তু একজন মানুষ এলে তাকে একেবারে ব্যতিব্যস্ত করে তোলে। সম্প্রতি মান্দ্রাজে একটী ঘটনা ঘটেছে। একজন প্যারিয়া পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে, পবিত্র ধর্ম্মভাবের আবেগে মন্দিরের সম্মুখস্থ হয়—আত্মবিস্মৃত হয়েই সে মন্দিরের সম্মুখীন হয়েছিল। তাহার মোহ অপসারিত হ’লে সে মন্দির ছেড়ে চলে আস্ছিল এমন সময় ধরা পড়ে গেল। ‘মন্দির অপবিত্র হয়েছে— সর্ব্বনাশ হয়েছে’ ইত্যাকার কোলাহলের মধ্যে ঐ লোকটীকে চোর, ডাকাত কিম্বা খুনী আসামীর মত অপরাধীজ্ঞানে পুলিশের হাতে সমর্পণ করা হইল। উচ্চশ্রেণীর হিন্দু বিচারপতি তাহার জরিমানা করিলেন—কারাদণ্ডের ব্যবস্থা দিলেন। এই লঘুপাপে গুরুদণ্ডের ব্যবস্থা দেখে অসহযোগ আন্দোলনের প্রধান নেতা শ্রীযুক্ত রাজাগোপাল আচারী নিজেকে আর সাম্লে রাখ্তে পারলেন না। তিনি ঐ প্যারিয়ার পক্ষাবলম্বন করে উচ্চ আদালতে আপীল কর্লেন। আপীলে লোকটা নিষ্কৃতি পেল—জেল আর হ’ল না। জজ একটা টেকনিক্যাল গ্রাউণ্ডে তাকে মুক্তি দিলেন—বল্লেন ইচ্ছাকৃত অপবিত্র করার কোন
পাতা:আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী.djvu/৩৫৭
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩২৬
আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী