পাতা:আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী.djvu/৩৯

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী

করে। যদি ঐ ধূর্ত্তদিগের ইহাতে সম্পূর্ণ বিশ্বাস থাকে, তবে তাহারা যজ্ঞেতে আপন আপন পিতা মাতা প্রভৃতির মস্তক ছেদন না করে কেন? তাহা হইলে অনায়াসে পিতা মাতা প্রভৃতির স্বর্গলাভ হইতে পারে এবং তাহাদিগকে আর পিতা মাতার স্বর্গের নিমিত্ত শ্রাদ্ধাদি করিয়া বৃথা কষ্টভোগ করিতে হয় না। আর শ্রাদ্ধ করিলে যদি মৃত ব্যক্তির তৃপ্তি হয়, কোন ব্যক্তি বিদেশে গমন করিলে তাহাকে পাথেয় দিবার প্রয়োজন কি? বাটীতে তাহার উদ্দেশে কোন ব্রাহ্মণকে ভোজন করাইলেই তাহার তৃপ্তি জন্মিতে পারে। অপিচ এইস্থানে শ্রাদ্ধ করিলে স্বর্গস্থিত ব্যক্তির তৃপ্তি হয়, তবে অঙ্গনে শ্রাদ্ধ করিলে প্রাসাদোপরিস্থিত ব্যক্তির তৃপ্তি না হয় কেন? যাহাতে কিঞ্চিদুচ্চস্থিতের তৃপ্তি না হয় তবে তদ্দ্বারা অত্যুচ্চ স্বর্গস্থিত ব্যক্তির তৃপ্তি কি প্রকারে সম্ভব হইতে পারে? অতএব মৃত ব্যক্তির উদ্দেশে যে সমস্ত প্রেতকৃত্য অনুষ্ঠিত হইয়া থাকে তাহা ব্রাহ্মণদিগের উপজীবিকা মাত্র, বস্তুতঃ কোন ফলোপধায়ক নহে।” (সর্ব্বদর্শন সংগ্রহ—জয়নারায়ণ তর্কপঞ্চানন কৃত অনুবাদ)।

 সেই সময়ে স্বাধীন চিন্তা কতদূর উচ্চশিখরে আরোহণ করিয়াছিল তাহা চার্ব্বাক-দর্শন আলোচনা করিলেই বুঝা যায়। তাহার পর বৌদ্ধধর্ম্মের প্রচারে সাম্য, মৈত্রী ও বিশ্বজনীন ভ্রাতৃভাব ভারতের সর্ব্বত্র ঘোষিত হইল। তাহার ফলে জ্ঞানোন্নতির পথ সর্ব্বসাধারণের পক্ষে উন্মুক্ত হওয়ায়, সর্ব্বশাস্ত্রের সম্যক আলোচনা আরম্ভ হইয়াছিল। বিশেষতঃ বৌদ্ধগণ রসায়ন ও চিকিৎসা শাস্ত্রের যথেষ্ট উন্নতি সাধন করিয়াছিলেন। একা নাগার্জ্জুনের নাম করিলেই যথেষ্ট হইবে। ইনি সুশ্রুততন্ত্র পরিবর্দ্ধিত ও নূতন আকারে প্রণয়ন করিয়াছিলেন বলিয়া প্রবাদ আছে।[]


  1. “History of Hindu Chemistry,” Introduction, Vol. I, 2nd. edition, Page XXIV.