পাতা:আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী.djvu/৩৯২

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাঙ্গালী-মরণের পথে
৩৬১

দৈনিক আয় মাত্র ৴৬ পয়সা ইহা যোগাইতে পারে? ফলকথা, শিশুদিগের অস্থি ও মাংস গঠনের একমাত্র উপযুক্ত খাদ্য দুগ্ধ। আমি বন্যপ্লাবিত রাজস্যহী জেলার আত্রাই অঞ্চল হইতে নদীয়া, যশোহর ও খুলনার গো-জাতির দুর্দ্দশা দেখিয়া অশ্রুপাত না করিয়া থাকিতে পারি না। ইহাদের আকৃতি যেমন খর্ব্ব, দেহ তেমনি জীর্ণশীর্ণ কঙ্কালসার। খাদ্যাভাব ও পালনে অযত্ন ইহার প্রধান কারণ। এখন আর গোচারণের মাঠ নাই, তাহা ছাড়া গৃহস্থগণের অবহেলা, শ্রমবিমুখতা ও তাচ্ছিল্য এই দুর্দ্দশার জন্য দায়ী। আমার নিজ গ্রামের ৬০ বৎসরের পূর্ব্বের অবস্থা নখদর্পণের ন্যায় দেখিতেছি। তখন দুধের সের দুই পয়সা ছিল এবং প্রত্যেক গৃহস্থের বাড়ীতে গোয়ালভরা সবলকায় গরু থাকিত। একজন অশীতিবর্ষ বৃদ্ধের মুখে শুনিলাম ১২৬৫ সালে তিনি ক্রিয়া কর্ম্মের জন্য ৫—৬ টাকা মণ মূল্যে ছানা ক্রয় করেন এবং ইহারও কিছু পরে খাঁটী স্বগন্ধযুক্ত ঘৃত টাকায় ৴১৷০ পাঁচ পোয়া করিয়া মিলিত। তিনি বলিলেন—এবং আমারও এই ধারণা ও অভিজ্ঞতা— যে এখনকার যুবকগণ ও কুলবধূরা গরুর জাব দেওয়া, গোয়াল পরিষ্কার করা —এক কথায় যাহাকে গো-সেবা বলে—তাহা এক প্রকার ছাড়িয়া দিয়াছে। তখন আবার প্রত্যেকের বাড়ীতে তিনটা চারিটী করিয়া বিচালীর গাদা গরুর খোরাকীর জন্য মজুত থাকিত।

 এখনকার স্কুল-কলেজের পড়া ছেলেরা গো-সেবা করিতে নিজেকে হেয়জ্ঞান করে, কাজেই দুধ খাইতে পায় না। এক ভ্রান্তিমূলক সংস্কার যে, গরু অনেক জবাই হয় বলিয়া দুধের পরিমাণ কমিতেছে। ইংরাজ জাতির মত গো-খাদক জাতি আর নাই; কিন্তু ইংলণ্ডে গরুর যত্ন ও পালন কত বেশী তাহা বলা যায় না। সেখানে গরুর জন্য ঘাসের ও গাঁজর এবং প্রকাণ্ড মূলা জাতীয় “Mangel Wurzel” প্রভৃতির স্বতন্ত্র