এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
চা-পান না বিষপান?
৩৬৯
বাঙ্গালী জাতিকেও চায়ের নেশাখোর করিবার নিমিত্ত ইংরাজ বণিকেরা কত রঙ্গ-বেরঙ্গের তর-বেতর বিজ্ঞাপন দিয়াছেন—জলের মত পয়সা ঢালিয়া কত হ্যাণ্ডবিল, কত প্লাকার্ড প্রচার করিয়াছেন। থিয়েটারে, বায়স্কোপের অভিনয়ে এবং মঞ্চের দৃশ্যে, ট্রামে, বাসে, বাড়ীর প্রাচীরে, ট্রেণে, ষ্টেশনে, বাজারে, গল্পে, হাটে, মেলায়, পূজাপার্ব্বণে, কোথায় চায়ের বিজ্ঞাপন ছড়ান হয় নাই? এমন কি বক্তার বক্তৃতায়, গানের ছড়ায়, কেতাবের প্লটে চায়ের কথা উঠিয়াছে—সংবাদ পত্রের স্তম্ভে বিজ্ঞাপনের ঘটার কথা না-ই উল্লেখ করিলাম। একে কোটীপতি ধনকুবের ইংরাজ বণিক, তাহার উপর তাঁহার সহায় স্বয়ং প্রবল প্রতাপ সরকার বাহাদুর। এ সোণায় সোহাগায়-মণিকাঞ্চন যোগাযোগে কি না সম্ভব হয়? তাই প্রচারের ও বিজ্ঞাপনের ফলও ফলিয়াছে। পূর্ব্বে প্রভাত হইলে লোক ‘ক। কা’ রব শুনিয়া শয্যাত্যাগ করিত, এখন ‘চা চা’ ডাক দিয়া শয্যা ত্যাগ করে! অতি প্রত্যুষে অলি-গলির চায়ের দোকানে বাঙ্গালী বাবুকে বাসিমুখে চা-পান করিতে যাইতে দেখা যায়—দোকানে সারি সারি বেঞ্চে বাবুদিগকে চায়ের জন্য ভোরের অন্ধকারেও হা-প্রত্যাশী হইয়া বসিয়া থাকিতে দেখা যায়। হায় রে নেশা!
প্রকৃত প্রস্তাবে, চা খাদ্য নহে, উহা উত্তেজক (Stimulant) মাত্র। আমার মনে আছে, বাঙ্গালার ভূতপূর্ব্ব ছোট লাট সার চার্লস ইলিয়ট একবার বলিয়াছিলেন যে, “Ganja is a concentrated food, গাঁজা ঘনীভূত খাদ্যদ্রব্য।”, এক ছিলিম গাঁজায় দম দিয়া পাল্কীবেহারারা একদমে এক ক্রোশ ছুটিয়া যায়, বাঁকুড়া জিলার রসুইয়া বামুন এক ছিলিম গাঁজা চড়াইয়া মাথায় গামছা বাঁধিয়া রাশীকৃত লুচি-মোণ্ডা অথবা অন্ন-ব্যঞ্জন প্রস্তুত করিয়া ফেলে। এই