পাতা:আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী.djvu/৪০৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পল্লীর ব্যথা
৩৭৩

তাঁহার প্রজাগণ ম্যাজিষ্ট্রেটের নিকট দরখাস্ত করিয়াছে, তিনি যেন আর, তাঁহার জমীদারীতে সশরীরে না আইসেন। বাকী-বকেয়া খাজনার উপর নজর ও সেলামী দিতে প্রজাগণের প্রাণান্ত হয়। অবশ্য, এ বিবরণ জমীদার সাধারণের উপর প্রযোজ্য, এমন আমি বলিতেছি না। তবে এ প্রকার নমুনা নিতান্ত বিরল নহে। সুখের বিষয়, সাতক্ষীরার জমীদারগণের প্রজারঞ্জক বলিয়া পুরুষানুক্রমে খ্যাতি আছে এবং তাহদের জমীদারীর ভিতর অন্যায় অত্যাচার একবারে নাই বলিলেও অত্যুক্তি হয় না।

 কয়েক মাস হইল, কৃষি-কমিশনে সাক্ষ্য দিবার সময় বলিয়াছিলাম যে জমীদার, যদি দেশবাসী হইয়াও প্রজা-পীড়ক হন, তাহা হইলে ও দেশের মঙ্গল। কেন না, পুষ্করিণী খনন, পুরাতন দীঘির পঙ্কোদ্ধার প্রভৃতি তাঁহাদের নিজ ব্যবহার্য্য জলের জন্য করিতেই হয়। তাহা ছাড়া বারো মাসে তের পার্ব্বণে যে টাকা ব্যয় হয়, সে টাকা দেশেই থাকিয়া যায়। কিন্তু কলিকাতাবাসী জমীদারগণ প্রজার অর্থ শোষণ করিয়া চৌরঙ্গীতে বিলাস-ভবনে বাস করেন; তাঁহাদের গৃহসজ্জা ও নিত্য ব্যবহার্য দ্রব্য, মোটর-গাড়ী, বিজলী বাতি ও পাখা, আরামকেদারা প্রভৃতি বিলাসের অঙ্গ, সমস্তই বিদেশী। এই সকল জমীদারকে আমি জিজ্ঞাসা করি, তোমরা জমীদারীর আয়ের কত ভগ্নাংশ প্রজাবর্গের উন্নতিকল্পে ব্যয় কর? এই ত গেল অনুপস্থিত জমীদারদিগের কথা। তাহার পর পল্লীগ্রামের আর এক সর্ব্বনাশ, যিনি একটু লেখাপড়া শিখিয়া মাথা তুলিয়াছেন, তিনি একবারে দেশছাড়া। শরৎ চট্টোপাধ্যায় ‘পল্লী-সমাজে’ যে চিত্র অঙ্কন করিয়াছেন, তাহা বাঙ্গালার সকল পল্লীর উপর প্রযোজ্য। যত অকর্ম্মা অশিক্ষিত ‘রদী মাল’, তাহারাই গ্রামে থাকিয়া যত রকম কোন্দল, মামলা