পাতা:আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী.djvu/৪০৬

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পল্লীর ব্যথা
৩৭৫

করায়ত্ত করিয়াছে; তাহারা লোটা-কম্বল সম্বল লইয়া কত দূর-দেশ হইতে আসিয়া অতর্কিতভাবে এখানকার সমস্ত ব্যবসায় হস্তগত করিয়াছে। অথচ আমরা আমাদের ছেলেদিগকে ৫ বৎসর বয়স হইতেই বিদ্যালয়ে পাঠাই, পাঠের তাড়নায় তাহদের স্বাস্থ্য ভঙ্গ করি—একটার পর আর একটা, তাহার উপর আর একটা পাশ করাই, পরে হীনবীর্য্য অস্থিকঙ্কালসার যুবকগণ চাকরীর অভাবে হা—অন্ন হা-অন্ন করিয়া হৃদয়-বিদারক চীৎকার করিতেছে।

 তুমি সহরের দিকে যতই দৃষ্টিনিক্ষেপ কর না কেন, আদমশুমারীর বিবরণে জানা যায়, শত করা ৫/৬ জন মাত্র সহরে বাস করে। আর বাকী ৯৪/৯৫ জন ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় ম্যালেরিয়াগ্রস্ত হইয়াও পাড়াগাঁয়ে বাস করিতে বাধ্য। এই জনসঙ্ঘ লইয়াই ত বাঙ্গালী জাতি। আমরা কলিকাতায় বসিয়া যতই রাজনৈতিক আন্দোলন করি না কেন, যত দিন না আমরা এই বিপুল জনসংঘের মধ্যে লোকশিক্ষা বিস্তার করিতে পারিব, তত দিন রাজপুরুষদের নিকট কোন প্রকার যে দাবী-দাওয়া আদায় করিতে পারিব, তাহা মনে হয় না। এখন আর এক অদ্ভূত নেশা জাতিকে অভিভূত করিয়াছে, অর্থাৎ কাউন্সিলে প্রবেশ। এই উন্মত্ততায় কাহাকেও বা ২০/২৫/৩০ হাজার, এমন কি, লাখ টাকা পর্য্যন্ত ব্যয় করিতে দেখা গিয়াছে। সে দিন এক জন বিশিষ্ট এবং অভিজ্ঞ সংবাদপত্রসেবীর সহিত আলাপ করিতে করিতে আমি আক্ষেপ করিয়া বলিয়াছিলাম যে, এই নির্ব্বাচনব্যাপারে সমগ্র বাঙ্গালায় অন্যূন ১২/১৫ লাখ টাকা ব্যয় হইয়াছে। তিনি হাসিয়া বলিলেন, ৫০ লাখ টাকার এক পয়সা কম নহে। কাউন্সিলে ঢুকিয়া বড় বড় গগন-ফাটান ইংরাজী ভাষায় বক্তৃতা করিয়া দেশোদ্ধার করা বড়ই সহজ ব্যাপার। কিন্তু এই যে,