হইল; এখন প্রজাবর্গের মধ্যেও এই মামলাস্পৃহা বলবতী হইতেছে। আবার দেখা যায়, একটু ভাল ফসল হইলেই মোকর্দ্দমার সংখ্যা বেজায় বাড়ে; বৃটিশ রাজত্বের পূর্ব্বে জমীদারই নিজ নিজ অধিকারে সমস্ত মামলা নিষ্পত্তি করিতেন এবং গ্রামে পঞ্চায়েত কর্ত্তৃক সালিশী বিচারে অনেক বিবাদ-বিসংবাদ মিটিয়া যাইত। কিন্তু এখন সে সমস্ত প্রাচীন সনাতন প্রথা লোপ পাইয়াছে। গভর্ণমেণ্টেরও যত কোর্ট-ফি বাড়ে, ততই সুবিধা। রাজনৈতিক আন্দোলনকারীর মধ্যে আমাদের দেশে ব্যবহারাজীবিগণই শীর্ষস্থান অধিকার করিয়া আছে। মামলা-মোকর্দ্দমা কমিলে উকীল, ব্যারিষ্টার, মোক্তার, টাউট প্রভৃত্তির অন্ন যাইবে। স্বতরাং তাঁহারা স্বার্থের মূলে কুঠারাঘাত করিবেন কেন? পূর্ব্বে গ্রামের মাতব্বর বা পঞ্চায়েৎ বিবাদী বিষয় নখদর্পণের মত দেখিতেন; স্বতরাং অতি সহজেই ন্যায্যবিচার হইত। এখন মিথ্যা, প্রবঞ্চনা, ধাপ্পা দিয়া আদালতের চোখে ধূলা দেওয়াই প্রধান উপায়। এই জন্য প্রবল পক্ষেরই জয়। যে দুর্ব্বল, বৃটিশ-আদালতে তাহার সুবিচার আশা করা বৃথা। এক দিকে কোর্ট-ফি, উকীলের ফি, মূলতুবীর পর মূলতুবী, নিম্ন আদালত হইতে উচ্চ আদালত, আবার উচ্চ হইতে উচ্চতর বিচারালয়-এই প্রকারে এক একটা মোকর্দ্দমা বছরের পর বছর চলিতে থাকে। ইহাতে বাদী প্রতিবাদী উভয়েই সর্ব্বস্বান্ত হয়। মুসলমান বাদশাহের সময়েও দীনদুঃখী সাক্ষাৎভাবে আসিয়া আবেদন-নিবেদন করিতে পারিত। কাবুলের বর্ত্তমান আমীর আসানুল্লা খাঁ পূর্ব্বকার এই প্রথার অনুবর্ত্তী হইয়া বিচারপ্রার্থী দরিদ্র প্রজাদের দুঃখের কাহিনী শুনানীর জন্য সপ্তাহে সপ্তাহে এক দিন নিদিষ্ট করিয়া দিয়াছেন। কিন্তু আমাদের দয়ার্দ্রচিত্ত গভর্ণমেণ্ট কোর্ট-ফি ভিন্ন কাহারও আবেদন গ্রাহ্য করেন না।
পাতা:আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী.djvu/৪১২
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পল্লীর ব্যথা
৩৮১