৫০।৬০ বৎসর পূর্বে গ্রামে গ্রামে গোয়াল-পোনা গরু থাকিত। গোচারণেরও অনেক মাঠ ছিল এবং বর্ষাকালে গরুর খাদ্যোপযোগী যথেষ্ট পল, বিচালী সংগ্রহ থাকিত। এখন পাটের চাষ বাহুল্য হওয়ায় এবং সকল শ্রেণীর একমাত্র উপজীব্য কৃষি হওয়ায় সমস্ত গোচারণের মাঠ ঘেরাও হইয়াছে। এখন আর ধর্ম্মের ষাঁড় দেখা যায় না। উপযুক্ত বৃষের অভাবে গোজাতি দিন দিন অবনতি প্রাপ্ত হইতেছে। গোজাতি যেমন আকারে খর্ব, তেমনই অস্থিকঙ্কালসার। খুলনা সহরে বর্ষাকালে টাকায় দেড় সের দুই সের দুধ, তাহাও মিলা ভার। পাড়াগাঁয়ে অনেক সময় টাকায় ৩৪ সের দুধ, তাহাও আবার দুষ্প্রাপ্য। ফল কথা, দুধের অভাবে শিশু সন্তান পুষ্টিলাভ করিতে পারে না এবং বাঙ্গালী জাতি ক্রমশঃই হীনবীর্য্য হইয়া পড়িতেছে।
যাহা হউক, আর পল্লীগ্রামের দুর্দশার কাহিনী বিবৃত করিয়া আপনাদিগের ধৈর্য্যচ্যুতি করিতে চাহি না। সকলের অপেক্ষা দুঃখের বিষয় এই যে, আমরা সংঘবদ্ধ হইয়া কোন কার্য করিতে পারি না। দেশের যাহা কিছু অভাব-অভিযোগ, দুর্দ্দশা, তাহার বিমোচনের জন্য আমরা হাঁ করিয়া গভর্ণমেণ্টের দিকে তাকাইয়া থাকি। হয় গভর্ণমেণ্ট, না হয় বিধাতাপুরুষ আমাদের সমস্ত অভাব কুলাইয়া দিবেন। আমরা নিজে কিছু করিব না; হাত-পা গুটাইয়া বসিয়া থাকিব। জলকষ্ট? ডিষ্ট্রীক্ট বোর্ডের ঘাড়ে সমস্ত ভার চাপাইয়া দিব, কিন্তু ভুলিয়া যাই যে, জিলাবোর্ডের আয় মাত্র ৪ লক্ষ টাকা। তাহা হইতে নিম্নশিক্ষা, স্বাস্থ্য, রাস্তা মেরামত প্রভৃতি বাদ দিলে অতি অল্প টাকাই থাকে। তাহা দ্বারা এই ১৪ লক্ষ লোকের অভাবমোচন কিছুতেই হইতে পারে না। পূর্ব্বেই বলিয়াছি, এই খুলনার অধিকাংশ স্থানই একফসলের দেশ; ৯ মাস যদি নিরবচ্ছিন্ন আলস্যে না কাটাইয়া আমরা