পাতা:আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী.djvu/৪১৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পল্লীর ব্যথা
৩৮৩

‘গাঁতা’ দিয়া কায করিতে আরম্ভ করি, তাহা হইলে যে কত শত শত পুষ্করিণীর ও দীঘির পঙ্কোদ্ধার হয়, তাহা বলা যায় না। ফল কথা এই উদ্দ্যমহীনতাই আমাদের সর্ব্বনাশের মূল হইয়াছে। আমরা সমস্তই বুঝি, কিন্তু কায করিবার ক্ষমতা নাই। আমরা কি প্রকার অলস ও উদ্যমহীন, তাহার একটি প্রকৃষ্ট উদাহরণ দিতেছি। প্রায় পাঁচ সপ্তাহ হইল, বাগেরহাট কলেজের সন্নিকটে এক জন চাষী গৃহস্থের বাড়ীর সন্নিকটে দেড় কাঠা পরিমাণ একটি পুকুর দেখিলাম। আমার এক জন সঙ্গী দেখাইলেন যে, পুকুরটি কচুরীপানার চাপে বুজিয়া গিয়াছে। শুধু যে জল দূষিত হইতেছে, তাহা নহে, ইহাতে মাছও বাঁচিতে পারিবে না। প্রত্যেক দিন স্নানের সময় যদি কাস্তে হাতে করিয়া এক জন দুই জন মিলিয়া আধ ঘণ্টাকাল এই ধাপ কাটে, তাহা হইলে এক সপ্তাহের মধ্যে সমস্ত পানা নির্ম্মূল হয়। কিন্তু এই “একফসলী” দেশে দিব্য হাত-পা কোলে করিয়া গৃহস্থ সুখে নিদ্রা যায়। ফলতঃ এ প্রকার উদ্যমহীন অলস জাতির পরিণাম বড়ই শোচনীয়।

 আমরা বছরের পর বছর প্রত্যক্ষ করিতেছি যে, খুলনা জিলায়, এমন কি, সমগ্র, বাঙ্গালায় হিন্দু-সমাজের মেরুদণ্ড ধোপা, নাপিত, কুমার, কামার প্রভৃতি শ্রেণী একেবারে লোপ পাইতেছে। কায়স্থ, ব্রাহ্মণ প্রভৃতি শ্রেণীর মধ্যে মেয়ের বিবাহ দেওয়া একটি দায়স্বরূপ হইয়াছে, উপরিল্লিখিত নিম্নশ্রেণীর মধ্যে অধিক পণে আবার কন্যা ক্রয় করিয়া বিবাহ করিতে হয়। কাজেই ৪০/৪৫ বছর বয়সে ২ শত হইতে ৪ শত টাকা পণে ৯/১০ বর্ষ বয়স্ক মেয়ে ক্রয় করিতে হয়। ইহারা অল্পদিন পরেই যুবতী বিধবা রাখিয়া ইহলোক হইতে বিদায় গ্রহণ করে। এই সমস্ত কারণে সমাজের কি বিষময় ফল হইতেছে,