পাতা:আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী.djvu/৪৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
১২
আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী

দেবদেবীর প্রতিমূর্ত্তি অদ্যাপিও ঐতিহাসিক অতীতের সাক্ষ্য প্রদান করিয়া হিন্দুর পুরাতন কীর্ত্তিকলাপের গাথা যেন নীরব সঙ্গীতে গাহিতেছে। আজ যে ভারতের শিল্প পণ্য বিলোপ প্রাপ্ত হইয়াছে, আজ বিংশ শতাব্দীর স্তরে দাঁড়াইয়াও যে ভারত প্রতীচ্য শিল্প বাণিজ্যের নিকট অবনতমস্তক, অথবা যে ভারতে বাণিজ্য কখনও সূচিত হইয়াছিল কি না তৎসম্বন্ধে সন্দেহ হয়, সেই ভারতই (বৌদ্ধ-সাহিত্য পাঠে জানা যায়) Broach (বরোচ) হইতে Alexandra (আলেকসন্দ্রা) পর্য্যন্ত পণ্যাদি লইয়া যাইতেন। এই বাণিজ্যসংক্রান্ত আদান প্রদানের সঙ্গে সঙ্গে উপনিষদের বিবৃত মতসকল Neo-Platonistদের নিকট পৌঁছে। বস্তুতঃ বাণিজ্য দ্বারা সূচিত সম্বন্ধ ক্রমেই জ্ঞান শিক্ষা বিস্তারের হেতু হইয়া থাকে; পরস্পর সংযোগ হওয়াতে কেমন অজ্ঞাতভাবে জাতিগত বৈষম্য ইত্যাদি ক্ষুদ্র প্রবৃত্তি শারদীয় আকাশে মেঘমালার ন্যায় অপসারিত হয়। জ্ঞান জগতেও শিশু-প্রবৃত্তি বর্ত্তমান। উহাই একটু লুক্কায়িত ভাবে ক্রিয়া করে মাত্র। বালক যেমন যাহা দেখিল অমনি শিখিবার জন্য— অন্ততঃ অনুকরণ করিবার জন্য ব্যস্ত হয়, যতক্ষণ না তাহার কৌতূহলনিবৃত্তি হয়, ততক্ষণ যেমন সে পিতামাতার নিকট দৌরাত্ম্য করিতে থাকে, বয়োবৃদ্ধেরাও অল্পাধিক তাহাই করিয়া থাকেন। কোথায় কোন্ জাতির কি ভাল আছে, যেই সেই বিষয় শ্রুতিগোচর হইল, যখনই কোন সত্য আবিষ্কৃত হইল, উহা কাফ্রির দ্বারাই হউক আর চীনের দ্বারাই হউক, সভ্যজগৎ উহার তাৎপর্য্য গ্রহণে ও আয়ত্তীকরণে ব্যস্ত হইয়া পড়ে। কোথায় কোন্ সুদূর প্রান্তে কোন্ এক বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব আবিষ্কৃত হইল, কোথায় এক মহাপুরুষ নূতন ধর্ম্মমত প্রচার করিলেন, অমনি বিদ্যুৎবেগে তাহা চারিদিকে ছড়াইয়া পড়িল। ইউরোপে ইহার জাজ্জ্বল্যমান উদাহরণ দেখিতে পাওয়া যায়। যেমন