পাতা:আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী.djvu/৪৪

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাঙ্গালীর মস্তিষ্ক ও তাহার অপব্যবহার
১৩

মার্টিন লুথার পোপের পৌরোহিত্য খণ্ডন করিয়া নিজের স্বাধীম চিন্তাপ্রস্তুত অভিমত Wurtemburgএর গির্জ্জাদ্বারে ঘোষণা করিলেন, তখনই এই সুসমাচার সমগ্র ইউরোপে, এক প্রান্ত হইতে অপর প্রান্ত পর্য্যন্ত প্রচারিত হইয়া, তুমুল আন্দোলন উপস্থিত করিল। আবার গ্যালিলিও, কোপার্নিকস্ ও নিউটন প্রভৃতি যেমন নূতন জ্যোতিষিক তত্ত্ব প্রচার করিলেন, অচিরে উহা সমগ্র ইউরোপের, সমগ্র জগতের সাধারণ সম্পত্তি হইয়া পড়িল।

 যাহা হউক, আমাদের শাস্ত্রকারগণ বিদেশ ও সমুদ্রযাত্রা নিষেধ করিয়া ভারতের ভাবী উন্নতির পথ বন্ধ করিলেন। রক্ষণশীলতায়ও যে খানিকটা উপকার আছে তাহার সন্দেহ নাই, কিন্তু উহার একটা সীমা আছে যাহা অতিক্রম করিলেই হাস্যাস্পদ হইতে হয়। সময়ের পরিবর্ত্তনের সঙ্গে সঙ্গে নূতন হইতে নূতনতর ভাব সকল মানব মনে সমাবেশ হয়, তাহা বুঝিতে হইবে। কি সামাজিক, কি রাজনৈতিক, কি আধ্যাত্মিক প্রত্যেক বিভাগেই, অলক্ষ্যভাবে যেন কালের পাখায় ভর করিয়া পরিবর্ত্তন আসিয়া পৌঁছে। তখন অসাড় হ‍ইয়া থাকিলে, জগতের সংগ্রামে আহুত হইয়াও নিস্পন্দভাবে অবস্থান করিলে, সে জাতির অধোগতি কি পর্য্যন্ত হইবে তাহা ভাবিলেও আশঙ্কিত হইতে হয়। একটু তলাইয়া দেখিলে উপলব্ধি হয় যে এই হিন্দুরক্ষণশীলতার অভ্যন্তরে একটা অহিতকর প্রবৃত্তি নিহিত আছে। ললিতকলাবিৎ রাস্কিনের একটী কথা এস্থলে বড়ই প্রযোজ্য। তিনি এক সারগর্ভ বক্তৃতায় বলিয়াছেন যে, মানুষের চরম অবনতি তখনই সূচিত হয় যখন তাহার চরিত্র হইতে সম্ভ্রমের ও গুণগ্রাহিতার প্রবৃত্তি তিরোহিত হয়। হিন্দুর যাহা কিছু তাহাই শ্রেষ্ঠ, হিন্দু ভিন্ন সকল জাতি ম্লেচ্ছ ও বুর্ব্বর তাহাদের নিকট আমাদের কিছুই শিখিবার নাই, এই প্রকার সংস্কারসকল