যে দিন আমাদের জাতীয় চরিত্রে প্রবল অধিকার স্থাপন করিল, সেই দিন হইতে আমাদের উন্নতির মার্গ কণ্টকিত হইল।[১] সেই দিন হইতে হিন্দু জাতি কূপমণ্ডুক হইল, অহঙ্কার ও আত্মাদরে স্ফীত হইয়া জগতের শিক্ষা ও জগতের দীক্ষা তৃণজ্ঞান করিয়া অলক্ষিত ভাবে অবনতির গভীর পঙ্কে নিমজ্জিত হইল। আজ আমরা “হিন্দু” বলিলে কেবল মুষ্টিমেয় কতকগুলি লোকের প্রাধান্য বুঝি মাত্র। এই গণ্ডীর ভিতর ফোঁটা তিলক কাটিয়া শাস্ত্রের ভেল্কী যিনি যত খাটাইবেন, তিনিই তত হিন্দু। সাধারণের নিকট জ্ঞানদ্বার রুদ্ধ। সে চাবি সেই গণ্ডীস্থিত গুটিকতক হিন্দুর হাতে। স্বামী বিবেকানন্দ যথার্থই বলিয়াছেন:—
“যে ধর্ম্ম গরীবের দুঃখ দেখে না, মানুষকে দেবতা করে না, তা কি আবার ধর্ম্ম? আমাদের কি আর ধর্ম্ম? আমাদের ‘ছুৎমার্গ’ খালি ‘আমায় ছুঁয়ো না, আমায় ছুঁয়ো না।’ হে হরি! যে দেশের বড় বড় মাথা গুলো আজ দু হাজার বৎসর খালি বিচার কচ্ছে, ডান হাতে খাব, কি বাম হাতে খাব, ডান থেকে জল-নেব, কি বাম দিক থেকে, কট্ এট্ ক্রাং ক্রুং বিহি ইত্যাদি যে দেশের মূলমন্ত্র, তাহাদের অধোগতি হবে না ত আর কাদের হবে!”
সমাজ যখন এইপ্রকার হীনাবস্থায় পতিত হয়, তখন পিপীলিকাশ্রেণীর ন্যায় অনন্ত অকল্যাণকর রীতিনীতি আসিয়া সমাজের হৃদয় ক্ষত বিক্ষত করিতে থাকে। ব্রাহ্মণ্য আধিপত্যে জর্জ্জরিত বাঙ্গালায় শীঘ্রই তাহার উপযুক্ত পৃষ্ঠপোষক “বল্লালী কৌলিন্য” আসিয়া জুটিল। শাস্ত্রের
- ↑ কিন্তু প্রাচীনকালের হিন্দুরা এ বিষয়ে যথেষ্ট উদারচিত্ত ছিলেন। তাঁহারা ম্লেচ্ছ যবনাচার্য্যদিগের পদতলে বসিয়া শাস্ত্রশিক্ষা করিতে লজ্জাবোধ করিতেন না। বরাহমিহির বলিয়াছেন:—
“ম্লেচ্ছাহি যবনান্তেষু শাস্ত্রমিদম্ স্থিতম্ ঋষিষত্তেঽপি পূজ্যন্তে”—