পক্ষান্তরে যাঁহারা সমাজের নেতা বলিয়া অহঙ্কার করিয়া থাকেন তাঁহারা বৈষম্যের কল্পিত মাত্রাটা গভীরতর রেখায় অঙ্কিত করিবার প্রয়াস পাইতে লাগিলেন। ইহার অবশ্যম্ভাবী ফল ফলিয়াছে। স্বদেশপ্রেম ও স্বজাতি-প্রেম নামক স্বর্গীয় ভাব দুইটি ভারতবর্ষ হইতে চলিয়া গিয়াছে। বস্তুতঃ স্বদেশপ্রেম বলিয়া যে কিছু ভারতবর্ষে কখনও ছিল এমন মনে হয় না, কেন না এই বৈষম্য আজ বহুশত বর্ষ হইতে সমাজ-হৃদয়ের উষ্ণ শোণিত চুষিয়া নিঃশেষ করিতেছে। আপনার ও স্ত্রীপুত্ত্রের জীবিকা সংস্থানই যে জাতির মুখ্য উদ্দেশ্য, যে জাতি প্রতিবেশীর দুঃখ বোঝে না, যে জাতি আপনার গণ্ডীর বহির্ভাগে স্বীয় ভালবাসার আনন্দময় প্রভাব বিস্তার করিতে পারে না, যে জাতির সম্মুখে সর্ব্বাপেক্ষা উচ্চ আদর্শ—জিজ্ঞাসু না হইয়া শাস্ত্রোক্ত বচনে আত্মসমর্পণ, সে জাতির হৃদয়ে স্বদেশপ্রেম আসিবে কি প্রকারে? যে দেশের সমাজ হাতে ধরিয়া আশৈশব “তুমি বড়, এ নিকৃষ্ট” ইহাই সযত্নে শেখায়, সে দেশে জাতীয়তার ভাব আসিবে কি প্রকারে? সে দেশ ক্ষুদ্রের প্রাণের আবেগের সহিত আপনার মহৎ প্রাণের উচ্ছ্বাস মিশাইবে কেমন করিয়া?
ধীরে ধীরে কি এক আশ্চর্য্য পরিবর্ত্তন আসিয়া পৌঁছিল। ইংরাজরাজের সমাগমে প্রতীচ্য দেশের এক প্রবল হাওয়া আসিয়া প্রাচ্য জলধি বিচলিত করিল। সেই আবর্ত্তে হাল ধরিতে গিয়া অনেক কর্ণধার ইউরোপীয় সভ্যতার মাদকতায় আপনাদিগের অস্তিত্ব বিসর্জ্জন দিয়াছিলেন সত্য, কিন্তু সেই আমূল পরিবর্ত্তনের দিনে এক মহাপুরুষ আবির্ভূত হইয়া বাঙ্গালাদেশ কেন, সমগ্র ভারতকে তুলিয়া ধরিবার প্রয়াস পাইলেন। সেই মহাপুরুষের আবির্ভাব, আমি বলি, পূর্ব্ব মহাদেশের সৌভাগ্যাকাশের সর্বপ্রথম নক্ষত্র।