পাতা:আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী.djvu/৫০

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাঙ্গালীর মস্তিষ্ক ও তাহার অপব্যবহার
১৯

সর্ব্বনাশ হইয়াছে, তাহাতে কিছুমাত্র সন্দেহ নাই। “দেশের তাঁতি” আর “দেশের জোলা” ইহাদিগকে অন্নাভাবে জাতি-ব্যবসায় ত্যাগ করিতে হইয়াছে সত্য, কিন্তু এই সর্ব্বনাশ স্বাভাবিক বলিলেও অত্যুক্তি হইবে না—প্রাকৃতিক নিয়মে দুর্ব্বলকে পরাজিত হইতেই হইবে, বলশালীর জয় অবশ্যম্ভাবী।

 এই প্রকারে দেশীয় শিল্পের কোমল মূলে সুতীক্ষ্ণ কুঠারাঘাত পড়িল। ভারতীয় শিল্প নির্ম্মূল হইল। বৈদেশিক শিল্প ভারতবর্ষের অভাব মোচনে নিয়োজিত হইতে লাগিল, আর কোটি কোটি টাকা দেশ ছাড়িয়া বৈদেশিক সমৃদ্ধি বর্দ্ধনে ব্যয়িত হইতে লাগিল। ইংলণ্ড হইতে দেখিতে দেখিতে বহুশত ব্যবসায়ী কলিকাতা, বোম্বাই, মাদ্রাজ প্রভৃতি প্রধান প্রধান নগরে ব্যবসায়ের কেন্দ্র স্থাপন করিলেন, আর এক দিক হইতে এ দেশজাত কার্পাস, পাট, শস্য প্রভৃতি ইংলণ্ডে চালান করিতে লাগিলেন। আমাদের দুরদৃষ্ট, তাই নিজের কার্পাস অপরের দ্বারা বুনাইয়া শতগুণ মূল্যে কিনিয়া লজ্জা নিবারণ করিতে লাগিলাম। ম্যান্‌চেষ্টার বৈদেশিক লক্ষ্মী আপনার গৃহে আবদ্ধ করিলেন, আর আমরা ভিখারী সাজিয়া রাস্তায় নামিতে বাধ্য হইলাম।

 এই সময়ে বাঙ্গালী কেরাণীর সৃষ্টি ইংরাজ বণিক প্রজাপতির কৃপায় আরম্ভ হইল। ইংরাজ বণিক বাঙ্গালীর সহায়তা ভিন্ন ব্যবসায় চালাইতে পারিতেন না; ক্রয় বিক্রয় আদান প্রদান প্রথমতঃ প্রায় সমস্তই বাঙ্গালী কেরাণীর হাত দিয়াই হইত। অনেক নিরক্ষর হৌসের মুৎসুদ্দিরা এই সুযোগে ক্রোড়পতি হইয়া পড়িলেন। কিন্তু অশিক্ষিতের হাতে বিপুল ঐশ্বর্য্যের আগমনে যাহা ঘটিবার তাহাই ঘটিতে লাগিল। ইন্দ্রিয়ের প্রবল প্ররোচনায় ও স্বাচ্ছন্দ্যের বাতাসে বিলাসিতার আগুন দাউ দাউ