পাতা:আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী.djvu/৫৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২২
আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী

দেখিতে পাইবার কোনও সম্ভাবনা আছে। ইংলণ্ডের বর্ত্তমান শিল্পের যে সমৃদ্ধি, ইহার বিকাশ যে কি প্রকার ক্রমিক তাহা ভাবিয়া দেখিলে অনায়াসেই বুঝিতে পারা যায় যে, অর্দ্ধশতাব্দী জাতীয় জীবনের অধ্যায়ে সামান্য পংক্তিমাত্র। প্রায় ৫০০ শত বর্ষ পূর্ব্বে যে শিল্পবাণিজ্যের সূচনা মাত্র হইয়াছিল, আজ তিল তিল করিয়া সেই শিল্পের উন্নতিসাধন করিয়া ইংলণ্ড তাহারই ফলভোগ করিতেছে। আমরা অদৃষ্টের দোষ দিয়া নিষ্কর্ম্মা হইয়া বসিয়া থাকি, “কি করিয়া হইবে,” “কেমন করিয়া হইবে” ইত্যাকার পুরুষত্ববিহীন বাক্যালাপে বহুমূল্য সময় ক্ষেপন করি, কিন্তু পাশ্চাত্যদেশের নিপুণতা, তাহাদের কার্য্যতৎপরতা, তাহাদের একাগ্রতা ও শ্রমশীলতা অর্জ্জন করিবার প্রয়াস একবারও পাই না। এই সব গুণরাশি না থাকিলে যে জগতের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় কখনও আপনার স্থান অধিকার করা যায় না তাহা বিস্মৃত হইয়া “সুযোগ পাইলাম না” বলিয়া, আলস্যের অঙ্কে আশ্রয় লইয়া থাকি। শুধু ব্যবসায় বাণিজ্যে কেন, জগতের সর্ব্ববিধ ব্যাপারেই একটু সাহস করিয়া ঝাঁপ দিতে না পারিলে উত্তীর্ণ হইবার সম্ভাবনা নাই। বস্তুতঃ জলে না নামিয়া মৎস্য ধরিবার প্রবৃত্তি ভারতের ন্যায় সুষুপ্ত দেশেই সম্ভব। কিন্তু ইহাই অত্যাশ্চর্য্য যে, এই সুষুপ্তি অধুনা দুর্ভিক্ষের প্রবল সংঘাতে ভাঙ্গা সত্ত্বেও এ ঘুমন্ত অলস জাতিতে আপনার পায়ে দাঁড়াইবার প্রবল ইচ্ছা এখনও জন্মিল না। তন্দ্রা ও আলস্যের সম্মোহন শক্তি এ মৃতপ্রায় জাতির অস্তিত্ব লোপ করিতে বসিয়াছে, বৈদেশিক শক্তির আত্মম্ভরিতাপূর্ণ পদাঘাতে মান, সম্ভ্রম ও ব্যক্তিত্ত্ব বহুকাল ঘুচিয়াছে, কিন্তু জানি না “এ কেমন ঘোর”! যে দেশ শস্যসম্ভার ও ঐশ্বর্য্যে অতুলনীয়, যে দেশের স্বাচ্ছন্দ্য উপমার বিষয়, সেই স্নেহময়ী জননীর আদরের সন্তান আজ কঙ্কালসাৱ হইয়া বৃক্ষপত্রে