পাতা:আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী.djvu/৫৮

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বাঙ্গালীর মস্তিষ্ক ও তাহার অপব্যবহার
২৭

দেখিতেছে। কলিকাতার অনেক অধিবাসীই ত বাঙ্গালী নহে এবং পেটের জ্বালায় হাহাকার করিতেছে। দশ হাজার ভাটিয়া কলিকাতায় সওদাগরি করিয়া ধনবান হইতেছে আর মসীজীবি বাঙ্গালী আধপেটা খাইয়া কোনমতে বাঁচিয়া আছে।

 কিন্তু সর্ব্বদেশব্যাপী শিল্পোন্নতির প্রবল চেষ্টা না থাকিলে কখনও মাতৃভূমির সৌষ্ঠব সম্পন্ন হইতে পারে না। যেমন বোম্বাইএ সেইরূপ বাঙ্গালায়ও দেশবাসী কর্ত্তৃক পরিচালিত কলকারখানার একান্ত আবশ্যক হইয়া পড়িয়াছে। এই শিল্পোন্নতির বিষয় বিবেচনা করিতে গেলে একটি প্রশ্ন স্বতঃই মনে উদিত হয়—শিল্প শিখিবার ব্যবস্থা কোথায়? জগতের শিল্পের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় আঁটিয়া উঠিতে হইলে, পাশ্চাত্য দেশের উন্নত শিল্পশালা সমূহে বহু অর্থ ব্যয় ও ক্লেশ সহ্য করিয়া শিক্ষানবীশ না হইতে পারিলে, উহা কখনও সম্ভবে না। সত্য, বহু অর্থ ব্যয় করিয়া বৈদেশিক বিদ্যালয় সমূহে শিল্পশিক্ষা, অত্যল্প লোকের ভাগ্যেই ঘটিয়া থাকে। এ দরিদ্র দেশে সেরূপ ব্যয় বহন শিক্ষার্থীর পক্ষে যথার্থই ক্লেশদায়ক স্বীকার করি। কিন্তু এই বিঘ্ন রাশি সত্ত্বেও অধ্যবসায় ও মস্তিষ্ক চালনা দ্বারা দেশে বসিয়াই শিল্পের আংশিক উন্নতি সাধনে সমর্থ হইতে পারা যায় সন্দেহ নাই। তৎপরে পরিমিত সংখ্যক কর্ম্মঠ যুবকগণকে উক্ত বিষয়সমূহে বিশেষজ্ঞ হইবার জন্য বিদেশে পাঠাইলে শিল্পের উন্নতি সহজসাধ্য হইয়া পড়ে। কিন্তু বর্ত্তমান অবস্থায় উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত যুবকগুণ, যাঁহারা যথার্থই কর্ম্মক্ষম হইতে পারিতেন, বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করিয়াই তাঁহারা চাকরীর অন্বেষণে ব্যস্ত হইয়া পড়েন, সামান্য ২০।২৫ টাকার মসীব্যবসায়ী হইয়াও অর্দ্ধানশনে স্ত্রী পুত্রাদির সহিত কালযাপন করিতে পারিলে কৃতার্থ হন। বস্তুতঃ এই সকল হতভাগ্য তরুণবয়স্ক যুবকবৃন্দের আজীবনব্যাপী ক্লেশের জন্য সমাজ দায়ী। কিশোর