তাঁহারা একথা সম্যক্ উপলব্ধি করিয়াছেন যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বার হইতে বাহির হইয়াই জ্ঞানসমুদ্র মন্থনের প্রশস্ত সময়। আমরা দ্বারকেই গৃহ বলিয়া মনে করিয়াছি, সুতরাং জ্ঞানমন্দিরের দ্বারেই অবস্থান করি, অভ্যন্তরস্থ রত্নরাজি দৃষ্টিগোচর না করিয়াই ক্ষুণ্ণ মনে প্রত্যাবর্ত্তন করি।
অবশ্য এইরূপ ঘটনার জন্য ছাত্রগণ দায়ী নহে—যে ভ্রমপূর্ণ নিয়মে আমাদের দেশে শিক্ষা প্রদত্ত হইতেছে সেই নিয়মই দায়ী। যে সকল বিষয়ে বালকগণ স্বভাবতঃ অনুরাগ প্রদর্শন করে—যেমন তাহাদের নিজের শরীরের কথা, নিজের গ্রামের কথা প্রভৃতি—সে সকল বিষয়ে তাহাদের কিছুই পড়ান হয় না অথচ এমন সব বিষয় তাহাদের পড়িতে হয় যাহার সহিত তাহাদের কোনও সাক্ষাৎ সম্বন্ধ নাই—যেমন দূরদেশের ভূগোল ও ইতিহাস। যিনি সাহিত্যের শিক্ষক তিনি কথার প্রতিশব্দ, ব্যাকরণের কচকচি এবং allusion প্রভৃতি দ্বারা ছেলেদের এমনি প্রপীড়িত করিয়া তুলেন যে ছেলেরা ভাবিবার অবসরই পায় না যে সাহিত্যে একটা রস বলিয়া জিনিষ আছে। অনেক স্থলে দেখা যায়, যাঁহার হস্তে গণিত শিক্ষাদানের ভার ন্যস্ত হয় তিনি বোধ হয় ভাবেন গণিত শাস্ত্রের উপর ছেলেদের একটা বিজাতীয় বিভীষিকা জন্মাইয়া দেওয়াই তাঁহার প্রধান কর্ত্তব্য, নহিলে তিনি সাধারণ ছাত্রগণকে অনর্থক জটিল সমস্যা-সমূহ পূরণ করিতে দিয়া তাহাদের জীবন অত্যন্ত দুর্ব্বিসহ করিয়া তুলেন কেন? এইরূপ শিক্ষাদানের ফল যাহা হইবার তাহাই হয়। ছেলেরা যে দিন পরীক্ষাসমুদ্র উত্তীর্ণ হয় সেই দিন হইতেই মা সরস্বতীর নিকট বিদায় গ্রহণ করে। জ্ঞান চর্চ্চার যে কিরূপ অতুলনীয় আনন্দলাভ হইয়া থাকে তাহা ত সে কোনও কালে শিখে নাই।[১]
- ↑ আমাদের শিক্ষা সম্বন্ধে স্থানান্তরে বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করিয়াছি।