স্কুল কলেজে অসার ও নীরস জ্ঞান আহরণের চেষ্টায় যেমন বালকগণের মস্তিষ্কের অপব্যবহার হয়, তেমনি যুবক ও প্রৌঢ়গণ তাহাদের অবসরকাল বিদ্যানুশীলনে ব্যয় না করিয়া গালগল্প ও নভেল পাঠ দ্বারা নষ্ট করিয়া থাকে। তাহারা বুঝে না একখানা নিকৃষ্ট নভেল পড়িয়া যে টুকু আনন্দ পাওয়া যায় ইতিহাস, জীবন-বৃত্তান্ত বা ভ্রমণ-বৃত্তান্ত পড়িলে তাহার অপেক্ষা অধিক আনন্দলাভ হয়, অথচ সঙ্গে সঙ্গে যথেষ্ট জ্ঞানবৃদ্ধি হয়।
আর কয়েকটী কথা বলিয়া আমি এই প্রবন্ধের উপসংহার করিব। আমি বুঝিতে পারিতেছি যে, প্রবন্ধের মধ্যে মধ্যে, হয় ত আবেগের বশে দুই একটা শক্ত কথা বলিয়া ফেলিয়াছি। আশা করি পাঠক বিশ্বাস করিবেন, যে সেই সকল কথা আমি বিদ্বেষের বশে লিখি নাই, জাতীয় দারুণ দুরবস্থা জনিত দুঃখই আমাকে ঐরূপ বলাইয়াছে।
ভারতবর্ষীয় প্রাচীন গৌরবের কথা আমি ভুলি নাই; পূর্ব্বপুরুষগণের পবিত্র স্মৃতির প্রতিও আমি কাহাকেও সম্ভ্রমহীন হইতে বলি না। কিন্তু যাঁহারা সেই স্মৃতির প্রতি সম্ভ্রমযুক্ত হইতে গিয়া তাঁহাদিগের ভুলগুলিকেও অলঙ্কার-বিভূষিত করিতে চাহেন—সে গুলির অনুকরণ করিতে চাহেন, তাঁহাদিগের জন্যই আমার এ প্রবন্ধের অবতারণা।
কুল্লূকভট্ট ও রঘুনন্দনের অপূর্ব্ব পাণ্ডিত্যের প্রশংসা শুনিয়াই যাঁহারা দেশে সেই প্রাচীন টোলের শিক্ষা-প্রণালী সংস্থাপন করিতে চাহেন, নূতমকে একেবারে তাড়াইয়া পুরাতনকে তাহার স্থানে আনিতে চাহেন, তাঁহাদিগের সহিত আমি কখনও একমত হইতে পারি না। নূতন ভারতবর্ষীয় জাতি, নূতন ও পুরাতন উভয়ের সম্মিলনে গঠিত হইবে। অন্ধ বিশ্বাস জাতীয় উন্নতির মূল হইতে পারে না।