পাতা:আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী.djvu/৬৩

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩২
আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী

 প্রাচীন হিন্দু জাতির মহান আদর্শ ভুলিলে আমাদের চলিবে না, কিন্তু সেই সঙ্গে বর্ত্তমান সময়ে উক্ত আদর্শের অনুকরণ কতটা সম্ভব তাহাও আমাদিগকে ভাবিতে হইবে।

 জাতিভেদ ও স্মৃতি ও সামাজিক বহু ব্যবস্থার গুণে ভারতবর্ষে যে এক শান্ত, উদ্বেগ বিহীন, প্রতিদ্বন্দ্বিতাবিহীন জীবনযাত্রাপ্রণালী আবিষ্কৃত হইয়াছিল, বৈদেশিক ঐতিহাসিকগণের প্রশংসিত যে সুন্দর পল্লীমণ্ডলসমূহ সংগঠিত হইয়াছিল—যেরূপ সমাজ সংগঠন পাশ্চাত্য দেশের কাউণ্ট, টলষ্টয় প্রভৃতি মনীষিগণের ও সোসিয়ালিষ্টগণের জীবনের চরম স্বপ্ন, ভারতবর্ষীয় যে সমাজশৃঙ্খলার ফলে এখনও হিন্দু জাতির মধ্যে পাপের সংখ্যা অন্য জাতিগণের তুলনায় অনেক কম, ভারতবর্ষের যে প্রাচীন পুণ্য-সমাজের তুলনায় পাশ্চাত্য দেশের দারুণ জীবন সংগ্রামযুক্ত সমাজকে দাবানল বলিয়া বোধ হয়, আমরা যেন সে সকল কথা না ভুলি। কিন্তু তাহার পরেই যে একটা “কিন্তু” আছে আমরা যেন সে “কিন্তু”টাও বাদ না দিই। যত দিন মানুষের স্বাভাবিক দুরাকাঙ্ক্ষা না বিদূরিত হইবে, যতদিন মানুষের মনে তাহার সহচরগণের উপর প্রাধান্য লাভ করিবার ইচ্ছা থাকিবে, যতদিন একজাতি অন্য জাতিকে নিজের স্বার্থের জন্য দাসত্বশৃঙ্খলে বদ্ধ রাখিতে চেষ্টা করিবে, ততদিনের মধ্যে যে জাতি নিজেদের সমাজকে সোসিয়লিজমএর (socialism) আদর্শে গঠিত করিবে, সে জাতিকে যে শীঘ্রই অন্যের দাসত্বে জীবন কাটাইতে হইবে সে বিষয়ে সন্দেহ নাই। ভারতবর্ষই ইহার প্রকৃষ্ট উদাহরণ স্থল।

 এমার্সন বলেন:—Universities are, of course, hostile to geniuses; which seeing and using ways of their own discredit routine.—বিশ্ববিদ্যালয়সমূহ প্রতিভার বিকাশের সহায়ক নহে—অন্তরায়। ধরাবাঁধা নিয়মের নিগড়ে বন্ধ থাকিয়া প্রতিভা