পাতা:আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী.djvu/৬৫

এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৩৪
আচার্য্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়ের প্রবন্ধ ও বক্তৃতাবলী

 কিন্তু পূর্ব্বেই বলিয়াছি, এই প্রতিভা ধরাবাঁধা নিয়মের মধ্যে থাকিয়া বিকসিত হইতে পারে না। স্বাধীন চিন্তার অভাবে উহা জন্মিতে পারে না। সাধারণ লোক হইতে বিভিন্ন ভাবে দর্শন করা, চিন্তা করা ও কার্য্য করাই উহার প্রধান লক্ষণ। একজন যে ভাবে চিন্তা করিয়াছে, যে ভাবে কার্য্য করিয়াছে—সে ভাবে কার্য্য করিলে উহার নিজের বিশেষত্ব থাকে কোথায়? প্রতিভার একটি কার্য্য দেখিয়া, উহার একদেশ দেখিয়া, উহাকে বিচার করিলে চলিবে না। উহাকে খণ্ড খণ্ড ভাবে বিচার করা চলে না। উহাকে সমগ্রভাবে দেখিতে হইবে। ইহা ঝঞ্ঝাবাত, স্রোতস্বিনী প্রভৃতির ন্যায় প্রকৃতির এক মহাশক্তি। কয়টা পাখীর বাসা ভাঙ্গিয়াছে, কয়টা লোক মরিয়াছে, কি কয়টা বাগান ভাঙ্গিয়াছে তাহা গণিয়া উহাদের কার্য্যের হিসাব করিলে চলিবে না সেই সঙ্গে উহারা কত নগরের দূষিত বায়ু বিদূরিত করিয়া, কত জমির উর্ব্বরতা বৃদ্ধি করিয়া, কত জনপদের পানীয় সংস্থান করিয়া—অসংখ্য জীবের জীবন রক্ষার ব্যবস্থা করিয়াছে, তাহার বিষয়ও ভাবিতে হইবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে অধঃপতন-যুগের ভারতবর্ষ হইতে প্রতিভা বুঝিবার শক্তি অনেকাংশে বিলুপ্ত হইয়াছে; কত শক্তিমান পুরুষকে জীবনের একটা ভুলের জন্য সমাজচ্যুত হইতে হইয়াছে, অনেক সময় বিপক্ষদলেই যোগ দিতে হইয়াছে। শত্রুতার সহায়তায়, একটু পেঁয়াজের গন্ধ, ভয় বা লোভে পড়িয়া একদিন অখাদ্য ভোজন, কত গৃহস্থের জাতিপাতের কারণ হইয়াছে। বাস্তবিকই হিন্দুগণ যেরূপ কঠোরভাবে সামাজিক নিয়মলঙ্ঘনকারীকে সমাজচ্যুত করিয়াছে তাহা আশ্চর্য্যজনক। হায়, সেকালের নিয়ম কর্ত্তা ব্রাহ্মণ পণ্ডিতগণ! আপনারা কি চাণক্যপণ্ডিতের মহাবাক্য ভুলিয়া গিয়াছিলেন (সর্ব্বনাশে সমুৎপ্রন্নে অর্দ্ধং ত্যজতি পণ্ডিতঃ) যে আপৎকালে অর্দ্ধেক পরিত্যাগ করিতে হয়! সে কালের দাম্ভিকগণ!